স্বাভাবিক ক্ষয়চক্রের ব্যাঘাত বা বাঁধা (Interruption of Fluvial Cycle) |

স্বাভাবিক ক্ষয়চক্রের ব্যাঘাত বা বাঁধা (Interruption of Fluvial Cycle)


স্বাভাবিক ক্ষয়চক্রের ব্যাঘাত
স্বাভাবিক ক্ষয়চক্রের ব্যাঘাত


    ক্ষয়চক্র চলাকালীন সমুদ্রপৃষ্ঠের উত্থান বা পতন হলে অথবা নদীর ক্ষয় করার ক্ষমতা হ্রাস অথবা বৃদ্ধি পেলে ক্ষয়চক্র নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই সম্পূর্ণ হয়ে যায় অথবা ক্ষয়চক্র সম্পন্ন হতে পারে না। ক্ষয়চক্রের স্বাভাবিক গতি ব্যহত হয়। ক্ষয়চক্রের এইরূপ অবস্থাকে স্বাভাবিক ক্ষয়চক্রের ব্যাঘাত বা বিঘ্ন বলে। সমুদ্রপৃষ্ঠের আপেক্ষিক পতন ঘটলে তাকে ক্ষয়ের শেষ সীমা ঋণাত্মক পরিবর্তন বলে। এর ফলে ক্ষয়চক্র পুনরায় শুরু হয়। আবার, সমুদ্রপৃষ্ঠের আপেক্ষিক উত্থান ঘটলে তাকে ক্ষয়ের শেষ সীমা ধনাত্মক পরিবর্তন বলে। এর ফলে নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই ক্ষয়চক্র শেষ হয়ে যায়।

ক্ষয়চক্রের বাধা সৃষ্টির কারণ:

প্রধানত তিনটি কারণে ক্ষয়চক্রের বাধা সৃষ্টি হয়ে থাকে-

1. ক্ষয়ের শেষ সীমার পরিবর্তন।

2. জলবায়ুর পরিবর্তন এবং

3. অগ্ন্যুদগম


1. ক্ষয়ের শেষ সীমার পরিবর্তন

    ক্ষয়ের শেষ সীমার পরিবর্তন ঘটলে ক্ষয়চক্রে বাধার সৃষ্টি হয়। এটি দুইভাবে হয়ে থাকে। যেমন-

    a. সমুদ্রপৃষ্ঠের ধনাত্মক পরিবর্তন: ভূমি ভাগের অবনমনের ফলে যদি মহাদেশীয় ভূভাগের সাপেক্ষে সমুদ্রপৃষ্ঠ উঁচু হয়ে যায় কিংবা হিমবাহ গলে গিয়ে সমুদ্র জলের উচ্চতা বৃদ্ধি পায়, তাহলে নদী হঠাৎই নিম্নক্ষয় সীমার কাছাকাছি চলে আসে। ফলে নদীর ক্ষয়কারী ক্ষমতা হ্রাস পায়। একে সমুদ্রপৃষ্ঠের ধনাত্মক পরিবর্তন (Positive change of sea level) বলে। এর ফলে কোনো অঞ্চলের ভূমিরূপ দ্রুত বা সরাসরি যৌবন থেকে বার্ধক্য বা অন্তিম পর্যায়ে পৌঁছায়। অর্থাৎ ক্ষয়চক্রের দ্রুত অগ্রগতি হয় এবং নির্ধারিত সময়ের সময়ের আগেই ক্ষয়চক্রের সমাপ্তি ঘটে।

    b. সমুদ্রপৃষ্ঠের ঋণাত্মক পরিবর্তন- কোনো একটি অঞ্চলে ভূমিভাগ উঁচু হয়ে উঠলে একে সমুদ্রপৃষ্ঠের ঋণাত্মক পরিবর্তন(Negative change of sea level) বলে। এইভাবে কিংবা সমুদ্রের অনেকটা জল তুষার বা বরফ রূপে মহাদেশীয় ভূভাগে জমে গেলে সমুদ্রপৃষ্ঠ নেমে যেতে পারে। সমুদ্রতলের অবনমনের ফলে ক্ষয়ের শেষ সীমা থেকে ভূমিভাগের উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় নদীর সম্ভাব্য স্থিতিশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং নদী পুনরায় আগের মতো ক্ষয় করার ক্ষমতা ফিরে পায়। একে নদীর পুনর্যৌবন লাভ বলা হয়। এটি তিন প্রকার- গতিময় পুনর্যৌবন লাভ, ইউস্ট্যাটিক পুনর্যৌবন লাভ এবং স্থিতিশীল পুনর্যৌবন লাভ।

2. জলবায়ুর পরিবর্তন- 

    a. বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেড়ে গেলে নদীর জল বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য ক্ষয় এবং বহনকাজ ও বৃদ্ধি পায়। আবার বৃষ্টিপাত হ্রাস পেলে নদীর ক্ষয় ও বহন করার ক্ষমতা কমে গিয়ে অবক্ষেপণ বা সঞ্চয় কাজ বৃদ্ধি পায়। উভয়ক্ষেত্রেই নদীর দৈর্ঘ্য বরাবর ও আড়াআড়িভাবে গঠিত পার্শ্বচিত্রে(Longitudinal and cross profile) মসৃণতা সৃষ্টির যে লক্ষ্যমাত্রা থাকে, তার পরিবর্তন ঘটে বলে ক্ষয়চক্র বাধাপ্রাপ্ত হয়। আবার

    b. জলবায়ু হঠাৎ শীতল হয়ে পড়লে নদীর পরিবর্তে হিমবাহের ক্ষয়কার্য প্রাধান্য পায়, অথবা জলবায়ু মরুপ্রকৃতির হয়ে গেলে নদীর বদলে বায়ুর ক্ষয়কার্য প্রাধান্যলাভ করে। ফলে দুটি ক্ষেত্রেই স্বাভাবিক ক্ষয়চক্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়।

3. অগ্ন্যুদগম

    a. অগ্ন্যুৎপাতের কারণে বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে লাভা সঞ্চিত হলে, ক্ষয়চক্রটি বাধাপ্রাপ্ত হয়। কারণ ক্ষয়চক্রের ফলে গঠিত ভূমিরূপগুলি লাভা স্তূপের নিচে চাপা পড়ে যায়।

    b. অনেক সময় নদীর গতিপথে আড়াআড়ি লাভা সঞ্চয়ের ফলে নদীর জল অবরুদ্ধ হয়ে একটি হ্রদ তৈরি হয়। পরে ক্রমাগত জল সঞ্চয়ের  ফলে একসময় নদী ওই আড়াআড়ি লাভা সঞ্চয়ের পাশ দিয়ে অথবা বিপরীত দিকে বইতে থাকে।


Post a Comment (0)
Previous Post Next Post

Random Products