ইমানুয়েল কান্টের নীহারিকা বা গ্যাসীয় মতবাদ আলোচনা করো (Nebular theory of E.Kant) | Evs Pedia |

ইমানুয়েল কান্টের নীহারিকা বা গ্যাসীয় মতবাদ আলোচনা করো (Nebular theory of E.Kant)
ইমানুয়েল কান্টের নীহারিকা বা গ্যাসীয় মতবাদ


ইমানুয়েল কান্টের নীহারিকা বা গ্যাসীয় মতবাদ (Nebular theory of E.Kant) :

 

ভিত্তি ও জনক: 1734 খ্রিস্টাব্দে এমানুয়েল সুইডেন বার্গের প্রাচীন নীহারিকার ধারণার ওপর ভিত্তি করে (1755 খ্রি:) জার্মান দার্শনিক ইমানুয়েল কান্ট তাঁর নীহারিকা বা গ্যাসীয় মতবাদ ব্যক্ত করেন। তত্ত্বটি নিউটনের মহাকর্ষ তত্ত্বকে ভিত্তি করে স্থাপিত।

 

তত্ত্বের মূল কথা:

1. বহু কোটি বছর আগে সৌরজগৎ ছিল অতি প্রাকৃতিক (super naturally) উপায়ে সৃষ্ট শীতল, গতিহীন, কঠিন পদার্থের বিশাল সমাহার বা মেঘপুঞ্জ।

2. এই মেঘপুঞ্জের ব্যাপ্তি ছিল তার কেন্দ্র থেকে সূর্যের নিকটতম গ্রহ পর্যন্ত।

3. মাধ্যাকর্ষণ শক্তির ফলে এই কঠিন পদার্থ গুলি পৃথক পৃথক আকর্ষণ শক্তিতে, একে অন্যের উপর আছড়ে পড়ত ও ক্রমাগত সংঘর্ষে লিপ্ত হত।

4. সংঘর্ষ জনিত প্রবল তাপ ও আবর্তন গতির সৃষ্টি হয়। তাই-

5. মহাশূন্যের শীতল স্থির প্রাথমিক পদার্থের আদিম পুঞ্জটি প্রচন্ড বেগমান, উত্তপ্ত, বিশালাকার ঘূর্ণায়মান গ্যাসীয় পিণ্ডে পরিণত হয়। একে নীহারিকা বা Nebula বলে।

6. মাধ্যাকর্ষণ এর ফলে নীহারিকাটি যত ঘন হয়েছে, আয়তনে তত ছোট হয়ে, বেড়েছে তার ঘূর্ণন বেগ।

7. প্রবল ঘূর্ণনের ফলে নীহারিকার নিরক্ষীয় তলের কেন্দ্রাতিগ বল অভিকর্ষ বল অপেক্ষা বহুগুণ বেড়ে যায়। তাই-

8. কেন্দ্রাতিগ বলের প্রভাবেই নীহারিকার প্রান্তদেশ থেকে একে একে নয়টি বলয় ছিটকে যায়,বহুস্তর আংটির মত।

9. নয়টি আংটির ন্যায় বিচ্ছিন্ন অংশ ঘনীভূত হয়ে 9 টি গ্রহ সৃষ্টি হয়।

10. অনুরূপে গ্রহগুলি থেকে ছিটকে বেরিয়ে আসা বলয় গুলি উপগ্রহ সৃষ্টি করেছে।

11. নীহারিকার কেন্দ্রীয় অংশটি সূর্য বা নক্ষত্রের সৃষ্টি করে।

12. গ্রহগুলি সূর্যকে এবং উপগ্রহগুলি নিজের চারদিকে ঘুরতে থাকে।

অর্থাৎ-

i. স্থির, কঠিন, শীতল পদার্থ রূপে সৌরজগৎ -

ii. কঠিন পদার্থের ক্রমাগত সংঘর্ষ

iii. প্রচন্ড উত্তাপ ও আবর্তন গতি  

iv. বেগমান উত্তপ্ত গ্যাসীয় নীহারিকা

v. নীহারিকার নিরক্ষীয় তলে কেন্দ্রবিমুখ বল সৃষ্টি

vi. বলয়ের আকারে বিচ্ছিন্ন 9 টি গ্রহ সৃষ্টি

 

সমালোচনা:

1. এই মতবাদটির কোনো বিজ্ঞানসম্মত ভিত্তি নেই।

2. কান্ট গ্যাসীয় পুঞ্জ সৃষ্টির আদি উৎসের কথা বলেননি।

3. কান্ট সূর্যের যে ঘূর্ণনের গতিবেগ কল্পনা করেছেন তা সূর্যের বহিরাংশ থেকে নতুন বলয় সৃষ্টির পক্ষে নিতান্ত কম।

4. তিনি শীতল, গতিহীন পদার্থের যে গতি সৃষ্টির কথা বলেছেন- তা "কৌণিক ভরবেগ সংরক্ষণ নীতি" মেনে চলে না।

5. মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রয়োগ সংক্রান্ত ব্যাখ্যাটি বেশ দুর্বল।

6. বিজ্ঞানীরা অনুমান করেন- শীতল প্রাথমিক পদার্থের সংঘর্ষে বিপুল তাপ সৃষ্টি হতে পারে না

7. ঘূর্ণায়মান নীহারিকাটির আয়তন বৃদ্ধি পেলে তার গতিবেগ বাড়ার কোন উল্লেখ নেই।

8. আদি বস্তুকণা পরস্পরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হলেই পদার্থের মধ্যে আবর্তন বেগ সৃষ্টি হতে পারে না।

9. এই প্রক্রিয়ায় গ্রহ-উপগ্রহ সৃষ্টি হলে এদের আবর্তনের  দিক (পশ্চিম - পূর্ব) একই দিকে হওয়ার কথা, কিন্তু বাস্তবে তা নেই। বৃহস্পতি ও শনির উপগ্রহ গুলি বিপরীত দিকে ঘুরছে।

 

গুরুত্ব :

1. মতবাদটি খুব সহজ সরল ও বোধগম্য।

2. নয়টি গ্রহ এবং তাদের উপগ্রহ সৃষ্টির ব্যাখ্যা এই তত্ত্বে আছে।

3. এই তত্ত্বে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির উপযোগিতা ও প্রয়োগ দেখানো হয়েছে।

4. সৌরজগতের উৎপত্তি এবং পৃথিবীর জন্মের ব্যাখ্যা এত সহজ-সরল এর আগে কখনও দেওয়া হয়নি।

5. এই তত্ত্ব পরবর্তী কালের বিজ্ঞানীদের অনেক আবিষ্কারে সাহায্য করেছে।

6. এই তত্ত্বানুসারে পরিষ্কার যে পৃথিবী উত্তপ্ত জ্বলন্ত গ্যাসীয় অগ্নিপিণ্ড থেকে তাপ বিকিরণ করে শীতল ও কঠিন হয়েছে।

 

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post

Random Products