জীববৈচিত্র্য (Biodiversity) সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা | EvsPedia |

জীববৈচিত্র্য (Biodiversity)- প্রাকৃতিক পরিবেশে আণুবীক্ষণিক জীবসহ উদ্ভিদ এবং প্রাণীকূলের সমাবেশে যে বৈচিত্র্যময় জীবমণ্ডল গড়ে ওঠে, তাকে ‘জীব-বৈচিত্র্য’ বলে। অন্যভাবে বলা যায়, কোন নির্দিষ্ট অঞ্চলের উদ্ভিদ, প্রাণী ও আণুবীক্ষণিক জীবসমূহের পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতে যে বাস্তুতন্ত্র গড়ে ওঠে, সেই বাস্তুতন্ত্রে অগণিত নানা ধরনের জীব প্রজাতির সমাহারকে বা সমাবেশকে ‘জীববৈচিত্র্য’ বলে।


জীববৈচিত্র্য


  • জীববৈচিত্র্য কাকে বলে?

প্রাকৃতিক পরিবেশে আণুবীক্ষণিক জীবসহ উদ্ভিদ এবং প্রাণীকূলের সমাবেশে যে বৈচিত্র্যময় জীবমণ্ডল গড়ে ওঠে, তাকে ‘জীব-বৈচিত্র্য’ বলে। অন্যভাবে বলা যায়, কোন নির্দিষ্ট অঞ্চলের উদ্ভিদ, প্রাণী ও আণুবীক্ষণিক জীবসমূহের পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতে যে বাস্তুতন্ত্র গড়ে ওঠে, সেই বাস্তুতন্ত্রে অগণিত নানা ধরনের জীব প্রজাতির সমাহারকে বা সমাবেশকে ‘জীববৈচিত্র্য’ বলে।

এককথায়, ‘জীববৈচিত্র্য’ বা ‘বায়োডাইভারসিটি’ হল পৃথিবীর সকল জীবের বৈচিত্রময়তা।

"Biodiversity" শব্দটি দুটি শব্দ হতে আগত - "Bio" অর্থাৎ "Life" (জীবন) এবং "Diversity" অর্থাৎ "Variety" বা "বৈচিত্র্যতা"।

‘জীববৈচিত্র’ হল কোন নির্দিষ্ট অঞ্চলে বসবাসকারী অসংখ্য উদ্ভিদ ও প্রাণীগোষ্ঠীর অর্থাৎ জীবের বৈচিত্র্যপূর্ণ সমাবেশ।

v 29 December “Biodiversity Day” হিসাবে চিহ্নিত।

·        Oxford dictionary of Geography অনুসারে,- "Various renge of flora and fauna is Bio-diversity".

·        UNEP- এর মতে- "নির্দিষ্ট অঞ্চলে জিন, প্রজাতি ও বাস্তুতন্ত্রের যোগফল হল জীববৈচিত্র্য।

·        C. J Barrow এর মতে- "কোন নির্দিষ্ট বাস্তুতন্ত্রে বিভিন্ন ধরনের প্রজাতির বৈচিত্র্য এবং কোন একটি প্রজাতির মধ্যে যে জিনগত বৈষম্য তাকে বলে bio-diversity।

·        Decastri এর মতে- "নির্দিষ্ট অঞ্চল ও নির্দিষ্ট সময়ে জিন, প্রজাতি এবং বাস্তুতন্ত্রের বৈচিত্রের মিথস্ক্রিয়া ও সামগ্রিক অবস্থা হল bio-diversity।


  • ‘জীববৈচিত্র্য’ শব্দের প্রথম ব্যবহার-

·        1985 খ্রিস্টাব্দে ডব্লু জি রোজেন (W G. Rosen) ‘সোমিয়ান ইনস্টিটিউটের ন্যাশনাল ফোরামে’ "জীববৈচিত্র্য" তথা "বায়োডাইভারসিটি" (Biodiversity) কথাটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন। এবং পরে 1988 সালে জনসমক্ষে আনেন পতঙ্গবিদ ই ও উইলসন (E O Wilson)।

  • উল্লেখ্য "জীববৈচিত্র্যের জনক" বলা হয় বিজ্ঞানী E. O. Willson কে। কারণ জীববৈচিত্র্যকে সারা বিশ্বের বিজ্ঞানমহলে প্রচার ও জনপ্রিয় করেন তিনি।


· 1968 সালে "বায়োলজিক্যাল ডাইভারসিটি" (Biological diversity) কথাটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন বন্যপ্রাণী বিজ্ঞানী ও সংরক্ষণবিদ রেমণ্ড এফ ডাসমান (Raymond F. Dasmann)। তবে 1968 সালে "বায়োলজিক্যাল ডাইভারসিটি" (Biological diversity) শব্দটি প্রথম ব্যবহার শুরু হলেও এর ব্যপক ব্যবহার দেখা যায় 1980 এর দশকে Thomas E. Lovejoy এর কাজের দ্বারা।

  • জীববৈচিত্রের বৈশিষ্ট্য

জীববৈচিত্রের বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নরূপ-

    প্রজাতি সম্ভার-

i. বিজ্ঞানীদের অনুমান পৃথিবীতে 50 লক্ষ থেকে 1 কোটি প্রজাতির জীব রয়েছে। এদের মধ্যে মাত্র 6 লক্ষ প্রজাতির জীব আবিষ্কৃত হয়েছে।

ii. প্রতিবছর নতুন কিছু প্রজাতির সন্ধান মিলছে। যেমন- 2013 খ্রিস্টাব্দে W. W. F পূর্ব হিমালয়ে 353 টি নতুন প্রজাতির কথা ঘোষণা করে।

    পরিবর্তনশীলতা- ক্রমপরিবর্তনের মাধ্যমে বিভিন্ন যুগে পৃথিবীর জীব প্রজাতি উন্নতি লাভ করেছে। এর মধ্যে- ক্রিটেসাস যুগ (সরীসৃপ প্রাণী)ডেভোলিয়ান যুগ (মৎস্য)ডেভোলিয়ান উত্তর যুগ (মৎস্য এর ন্যায় অন্যপ্রাণী)

    অবলুপ্ততা- অস্তিত্বের সংগ্রামে কোন জীব পরাজিত হলে পৃথিবী থেকে তার অবলুপ্তি ঘটে।

যেমন- বিশালাকার ডাইনোসর এভাবেই অবলুপ্ত হয়েছে।

    বন্টনের অসাম্যতা- পৃথিবীর সর্বত্র জীব বৈচিত্র্যের সমবন্টন ঘটেনি। যেমন- স্থলজ বাস্তুতন্ত্রের মধ্যে ক্রান্তীয় বৃষ্টি অরণ্যের জীব-বৈচিত্র্য সর্বাধিক (দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন এর সেলভা অরণ্যে)। আবার, জলজ বাস্তুতন্ত্রের মধ্যে সর্বাধিক জীববৈচিত্র্য দেখা যায় প্রবাল প্রাচীরে (বৃহৎ প্রবাল প্রাচীর- অস্ট্রেলিয়ার গ্রেট বেরিয়ার রিফ)। একে বলা হয় সমুদ্রের ক্রান্তীয় বৃষ্টি অরণ্য।

    জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ দেশ- নিরক্ষরেখার দুদিকে উষ্ণ আর্দ্র অঞ্চলে জীববৈচিত্র্য সর্বাধিক। এরূপ 12 টি জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ দেশ রয়েছে। যেমন- ব্রাজিল, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মাদাগাস্কার প্রভূতি।

    জীব বৈচিত্রের স্তর বা ধরণ- জন্মগত বৈচিত্র্য বা জিনগত বৈচিত্র্য, প্রজাতিগত বৈচিত্র্য ও বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য ইত্যাদি জীব বৈচিত্রের তিনটি পর্যায়ক্রমিক স্তর রয়েছে।

   

প্রজাতির নাম

প্রজাতির সংখ্যা

ভাইরাস

4000

ব্যাকটেরিয়া

4000

ছত্রাক

72,000

প্রোটোজোয়া

40,000




  • জীব বৈচিত্র্যের শ্রেণীবিভাগ বা প্রকারভেদ

জীব বৈচিত্র্য শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন বিজ্ঞানী ওয়াল্টার. জে. রোজেন। কোন একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের সমস্ত জিন প্রজাতি, বাস্তু তন্ত্রের বৈচিত্র্য ও তার সমগ্রতাকে জীববৈচিত্র্য বলে। বিজ্ঞানী Hajwood এবং Baste 1995 খ্রিস্টাব্দে জীববৈচিত্র্যকে নিম্নলিখিত ভাগে ভাগ করেন-

1.  জিনগত বৈচিত্র্য ( Genetic Diversity)

2. প্রজাতিগত বৈচিত্র্য (Species Diversity)

3. বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য (Ecosystem Diversity)


 

 

i. জিনগত বৈচিত্র্য (Genetic Diversity) - জিন জীবের বংশগতির ধারক ও বাহক। জীবের চারিত্রিক পার্থক্য নির্ধারিত হয় জিনগত পার্থক্যের উপর। কোনো নির্দিষ্ট জীব প্রজাতির মধ্যে যে জিনগত ভিন্নতা দেখা যায়, তাকে জন্মগত বা উৎপত্তিগত বা জিনগত বৈচিত্র্য বলে।


জিনগত বৈচিত্র্য (Genetic Diversity)
জিনগত বৈচিত্র্য (Genetic Diversity)

  • জিনগত বৈচিত্র্যের বৈশিষ্ট্য

যে জীবগোষ্ঠীর জিনগত বৈশিষ্ট্য বেশি, তারা পৃথিবীতে বহুদিন বাঁচে।

একটি প্রজাতির জিনগত বৈচিত্র্য কমলে, প্রজাতির অবলুপ্তি ঘটে।

জিনগত বৈশিষ্ট্য কোন প্রজাতিকে বা তার বাস্তুতন্ত্রকে পরিবেশের পরিবর্তনের সাথে অভিযোজিত   করে।

জীবপ্রজাতির প্রত্যেকেরই জিন সংক্রান্ত তথ্যভান্ডার বর্তমান।

জীবের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের ভিন্নতা আসে জিনগত বৈচিত্র্যের জন্য।

জিনগত বৈচিত্রের সংখ্যার ওপর প্রজাতি সংখ্যা নির্ভর করে। আবার প্রজাতির সংখ্যার উপর জীববৈচিত্রের প্রাচুর্য ও স্বল্পতা নির্ভর করে।

যে প্রজাতির জিনগত বৈশিষ্ট্য যত বেশি তার জীবের সংখ্যা তত বেশি।

নিয়ন্ত্রক- জিনগত বৈচিত্র্য দুটি বিষয়ের উপর নির্ভর –

i. জিনের ভিন্নতা 

ii. পরিবেশগত প্রভাব

উদাহরণ -

প্রজাতি

জিনগত বৈচিত্র্য

মানুষ

35 -45 হাজার

ধান

32- 50 হাজার

আখ

200 প্রকার (ভারত)

ফাজভাইরাস

100 প্রকার

মাইকোপ্লাজমা

450-700প্রকার

 

ii. প্রজাতিগত বৈচিত্র্য (Species Diversity)- কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলে বহুসংখ্যক উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতির সমাহারকে ঐ অঞ্চলের প্রজাতিগত বৈচিত্র্য বলে। উল্লেখ্য নির্দিষ্ট গুণসম্পন্ন জীবকূলকে প্রজাতি বলে। বাস্তুতন্ত্রে যত ভিন্ন প্রকার প্রজাতি রয়েছে তাদের সম্মিলিতভাবে প্রজাতি বৈচিত্র্য বলে।

প্রজাতিগত বৈচিত্র্য (Species Diversity)
প্রজাতিগত বৈচিত্র্য (Species Diversity)


  • প্রজাতিগত বৈচিত্র্যের বৈশিষ্ট্য-

প্রজাতিগত বৈচিত্র্য বিশ্বে সর্বত্র সমান নয়।

প্রজাতির বৈচিত্র্য দ্বারা বিভিন্ন দেশে জীববৈচিত্র্য বর্ণিত হয়।

জীবমন্ডলের প্রজাতির মধ্যে একটি সুসম্পর্ক রয়েছে।

যেমন- প্রজাতিগণগোত্রবর্গশ্রেণিরাজ্য

প্রজাতিসমূহ বাস্তুতন্ত্রে পারস্পরিক নির্ভরতার মধ্যে জীবনচক্র সম্পন্ন করে।

বিভিন্ন প্রজাতির জনসংখ্যাগত পার্থক্য যথেষ্ট দেখা যায়।

কোন প্রজাতির জনসংখ্যাধিক্য বা জনস্বল্পতা জীবপ্রজাতির বৈশিষ্ট্য। 

কোন বাস্তুতন্ত্রের সাম্যবস্থা নির্ভর করে প্রজাতির সমতার উপর।

প্রজাতির বৈচিত্র নির্ভর করে প্রজাতির প্রাচুর্য ও প্রজাতির সমতার উপর।

একটি একক অঞ্চলে, বিভিন্ন প্রজাতির জীবদের আধিক্যকে প্রজাতির প্রাচুর্য বলে এবং একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের বিভিন্ন প্রজাতির সদস্যদের সংখ্যার সমতা হল প্রজাতির সমতা।

  • প্রজাতিগত বৈচিত্র্যের শ্রেণীবিভাগ -

    প্রজাতি সমৃদ্ধি - কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলে সর্বমোট প্রজাতির সংখ্যা হল প্রজাতির সমৃদ্ধি। বিশ্ব সংরক্ষণ উপদেষ্টা কেন্দ্রের (World Conservation Monitoring Centre WCMC, 1992) গণনা অনুসারে বলা যায় পৃথিবীতে অস্তিত্ব রয়েছে এমন প্রজাতির সংখ্যা প্রায় 1.25 কোটি।

 

 

সমষ্টি

বর্ণিত প্রজাতির সংখ্যা

নির্ণীত মোট প্রজাতির সংখ্যা

1. প্রানী: মেরুদন্ডী

45,000

50,000

(i)           স্তন্যপায়ী

4,650

 

(ii)         পাখি

9,700

 

(iii)       সরীসৃপ

6,800

 

(iv)        উভচর

4,400

 

(v)         মাছ

23,000

 

·        পতঙ্গ

9,50,000

80,00,000

·        কম্বোজ: শামুকজাতীয় কোমল প্রানী)

70,000

2,00,000

·        সন্ধিপদ

40,000

1,50,000

·        কৃমি

15,000

5,00,000

2.    ছত্রাক

70,000

10,00,000

3.    উদ্ভিদ

2,50,000

3,00,000



প্রজাতির প্রাচুর্য- কোনো অঞ্চলে প্রজাতি সমূহের অন্তর্গত জীবগুলির প্রাধান্যই হল প্রজাতির প্রাচুর্য।

যেমন- কয়েকটি সদৃশ প্রজাতি একটি গণ (Genaral) এবং কয়েকটি সদৃশ গণ একটি গোত্র (Family) তৈরি করে।

রাজ্য পর্ব শ্রেণী বর্গ গোত্র গণ প্রজাতি জীবসংখ্যা ব্যক্তি

    আন্তঃসম্পর্কগত বৈচিত্র্য- কোনো নির্দিষ্ট   অঞ্চলে বর্তমান প্রজাতির মধ্যে সুনির্দিষ্ট পারস্পরিক সম্পর্কের ভিন্নতাকে আন্তঃসম্পর্কগত বৈচিত্র্য বলে। জীব বৈচিত্র্য পরিমাপের ক্ষেত্রে তিনটি বিষয়কে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়, এগুলি হল প্রজাতি প্রাচুর্য,আঞ্চলিকতা এবং দেশের মোট আয়তন।এই সব বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে নিম্নে জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ প্রথম 20 টি দেশের নাম উল্লেখ করা হলো-


স্থান             দেশ

1.                ব্রাজিল

2.                অস্ট্রেলিয়া

3.                দক্ষিণ আফ্রিকা

4.                ভারত

5.                 চীন

6.                ইন্দোনেশিয়া

7.                কলম্বিয়া

8.                মালয়েশিয়া

9.                ফিলিপিনস

10.               জাইর

11.               পানামা

12.               মেক্সিকো

13.              ভিয়েতনাম

14.              পেরু

15.              ক্যামেরুন

16.              ইকুয়েডর

17.             ভেনেজুয়েলা

18.            পাপুয়া- নিউগিনি

19.              কোস্টারিকা

20.              উগান্ডা

(উৎস: B. Groombridge, Biodiversity: The Global Environment, D. Brune et al (ed), 1997.)

 

iii. বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য (Ecosystem Diversity)- কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলে নানান বাস্তুতন্ত্রের সমস্ত সজীব ও অজীব উপাদানের মধ্যে যে বিপুল ভিন্নতা রয়েছে তাহা জীব বৈশিষ্ট্যগত বৈচিত্র্য। প্রত্যেকটি বাস্তুতন্ত্রেই রয়েছে নিজস্ব জীবগোষ্ঠী। এই জীবগোষ্ঠী গড়ে ওঠে বাস্তুতন্ত্রের মধ্যস্থিত উদ্ভিদ, প্রাণী এবং আণুবীক্ষণিক জীবের সমন্বয়ে। প্রত্যেকটি বাস্তুতন্ত্রের জীবগোষ্ঠী অন্য বাস্তুতন্ত্রের জীবগোষ্ঠী থেকে স্বতন্ত্র হয়। অরণ্য, তৃণভূমি, মরু ও মরুপ্রায় অঞ্চল, জলভাগ ইত্যাদি বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ধরনের বাস্তুতন্ত্র গড়ে ওঠে, যার মধ্যে প্রজাতির বৈচিত্র্য যথেষ্ট মাত্রায় দেখা যায়।

বায়োম জীবভৌগলিক অঞ্চল ভূদৃশ্যাবলি বাস্তুতন্ত্র বাসস্থান নিচ জীবসংখ্যা

বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য (Ecosystem Diversity)
বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য (Ecosystem Diversity)


·        বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্যের বৈশিষ্ট্য –

জীব ও পরিবেশের আন্তঃক্রিয়ায় বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য রচিত হয়।

এই বৈচিত্র্যের মান বাড়লে প্রজাতির প্রাচুর্য বাড়ে।

বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য স্বাভাবিকভাবে জীবগত বৈচিত্র্য সূচিত করে।    

বিভিন্ন বাস্তুতন্ত্রের বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য বিভিন্ন হয়।

 

বিজ্ঞানী Whittaker 1972 খ্রিস্টাব্দে বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্যকে তিনটি ভাগে ভাগ করেন-

1.               a. আলফা বৈচিত্র্য (α Diversity)

b.    বিটা বৈচিত্র্য ( β Diversity)

c.    গামা বৈচিত্র্য (Ɣ Diversity)

a. আলফা বৈচিত্র্য (α Diversity)- কোন নির্দিষ্ট বাস্তুতন্ত্রে বিভিন্ন জীবগোষ্ঠীর মধ্যে বৈচিত্র্যতাকে আলফা বৈচিত্র্য বলে। অর্থাৎ কোন একটি ক্ষুদ্র অঞ্চলে বসবাসকারী বিভিন্ন জীবের বৈচিত্র্যতা হলো আলফা বৈচিত্র্য। যেমন- সুন্দরবনে একটি দ্বীপের জীববৈচিত্র্য।

·        আলফা বৈচিত্র্যের বৈশিষ্ট্য-

আলফা বৈচিত্র্যের মান বাড়লে, প্রজাতির প্রাচুর্য বাড়ে।

            এর মাধ্যমে কোন অঞ্চলের প্রজাতির প্রাচুর্য জানা যায়।

একই গোষ্ঠীর অভ্যন্তরীণ বৈচিত্র্যকেও আলফা বৈচিত্র্য বলে।

একই জীবগোষ্ঠীভুক্ত জীবের মধ্যেকার বৈচিত্র্য নির্দেশ করে।

একটি নির্দিষ্ট ক্ষুদ্র বাসস্থানে উপস্থিত প্রজাতি বৈচিত্র্য হল আলফা বৈচিত্র্য।          

জীব বৈচিত্র্যের সর্বাপেক্ষা ক্ষুদ্রতম একক এটি।

এরা একই পরিবেশে থেকে একই সম্পদের উপর নির্ভরশীল জীব গোষ্ঠী।

 

b. বিটা বৈচিত্র্য (β Diversity)- একটি ভৌগোলিক অঞ্চল সংলগ্ন ভিন্ন ভিন্ন বাসস্থানের জীবগোষ্ঠীর যে বৈশিষ্ট্য তাহাই  বিটা বৈচিত্র্য। অর্থাৎ একই ভৌগোলিক সীমার মধ্যে থাকা দুটি বাসস্থানে উপস্থিত প্রজাতি বৈশিষ্ট্য হলো বিটা বৈচিত্র্য। যেমন- সুন্দরবনে দুটি পাশাপাশি দ্বীপের জীবগোষ্ঠীর বৈচিত্র্য।

·        বিটা বৈচিত্র্যের বৈশিষ্ট্য-   

অধিক বিটা বৈচিত্র্যের অর্থ বিভিন্ন বাসস্থানে থাকা প্রজাতির মধ্যে বৈসাদৃশ্য।

ইহা হলো ভিন্ন বাসস্থানগত পরিবেশে ভিন্ন ভিন্ন সম্পদের উপর নির্ভরশীল জীবগোষ্ঠী।

আন্তগোষ্ঠী বা আন্তবাসভূমি জীববৈচিত্র্যকে বিটা বৈচিত্র্য বলে।

বাসস্থানগত বৈচিত্র্যের জন্য জীবের বৈচিত্র্যকে বিটা বৈচিত্র্য বলে।

বিভিন্ন বাসস্থানে উপস্থিত বিভিন্ন জীবগোষ্ঠীর মধ্যে সাদৃশ্যসূচক হিসাব দ্বারা পরিমাপ           করা হয়।

বেশি বিটা বৈচিত্র্যের অর্থ বিভিন্ন বাসস্থানে উপস্থিত প্রজাতির মিল কম হওয়া।

 

c. গামা বৈচিত্র্য (Ɣ Diversity)- একটি ভৌগলিক অঞ্চলে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের জীবপ্রজাতির সামগ্রিক বৈচিত্র্যতাকে গামা বৈচিত্র্য বলে। অর্থাৎ একটি বৃহৎ ভৌগোলিক সীমার মধ্যে থাকা বহু অঞ্চলে উপস্থিত বিভিন্ন প্রজাতির প্রাচুর্যকে গামা বৈচিত্র্য বলে। যেমন- সুন্দরবনের সমগ্র দ্বীপের বৈচিত্র্য।

·        গামা বৈচিত্র্যের বৈশিষ্ট্য–

এর সাহায্যে বিভিন্ন অঞ্চলের সব প্রজাতির জীবের সম্পর্ক জানা যায়।

এই বৈশিষ্ট্য বেশি হলে পৃথকীকরণ বাড়ে অন্যথায় কমে।

ভৌগোলিক অঞ্চলের মধ্যে প্রজাতি সংখ্যা বা ঘনত্ব বৃদ্ধি পেলে গামা বৈচিত্র্যের মাত্রা ও বাড়ে।

বৃহদাকার ভৌগলিক অঞ্চলে উপস্থিত প্রজাতি বৈচিত্র্য হল গামা বৈচিত্র্য।         

একটি বৃহৎ অঞ্চলে আলফা ও বিটা বৈচিত্র্যের সমন্বয়ের রূপ হল গামা বৈচিত্র্য।

বিভিন্ন অঞ্চলে উপস্থিত বিভিন্ন জীবের আপাত সম্ভাবনা বা হার নির্ণয় করা হয়।

বেশি গামা বৈচিত্র্যের অর্থ প্রজাতির পৃথকীকরণ ও ভৌগোলিক অংশীদারিত্ব না থাকা।

 

জীববৈচিত্র্যের উষ্ণকেন্দ্র বা বায়োডাইভারসিটি হটস্পট

2. জীববৈচিত্র্যের উষ্ণকেন্দ্র বা বায়োডাইভারসিটি হটস্পট (Biodiversity Hotspot)- 1988 খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ বিজ্ঞানী নর্ম্যান মায়ারস (Norman Myers) তাঁর "The Environment" নামক পত্রিকায় প্রথম জীববৈচিত্রের হটস্পট ধারণার উল্লেখ করেন। তাঁর মতে- "Hotspot is earth's biologically richest and most endangered terrestrial ecoregious".

সংরক্ষণ বিদদের সংজ্ঞানুযায়ী- যে সকল প্রাকৃতিক আবাসস্থলে সর্বাধিক সংখ্যক প্রজাতি অবলুপ্তির পথে এবং সংকটাপন্ন সেইসব প্রাকৃতিক বাসস্থানকে সংরক্ষণের বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, তাদের “হটস্পট” (Hotspot) বলে।



  • “হটস্পট” (Hotspot) নির্ধারণের ভিত্তি-

নর্ম্যান মায়ারস (Norman Myers) হটস্পটগুলির নির্ধারণের ভিত্তি ঠিক করে। কোনো স্থান “হটস্পট” (Hotspot) হিসাবে নির্ধারণ হতে হলে-

i.             স্থানটিতে 0.5% বা 1500 টি আঞ্চলিকভাবে সীমাবদ্ধ প্রজাতি থাকতে হবে।

ii.            স্থানটির মধ্যে প্রায় 70% প্রজাতি আদিম জীব হলে স্থানটি “হটস্পট” (Hotspot) আখ্যা দেওয়া যেতে পারে।

  •  বায়োডাইভারসিটি হটস্পটের বৈশিষ্ট্য

জীববৈচিত্র্যের প্রাচুর্য এখানে সর্বাধিক।

এই সকল অঞ্চলে অধিক সংখ্যায় দুষ্প্রাপ্য উদ্ভিদ ও প্রাণী বাস করে। কিন্তু তাদের অস্তিত্ব বর্তমানে বিপন্ন হতে চলেছে।

পৃথিবীর এমন কিছু বনাঞ্চল আছে যার বিভিন্ন জীবপ্রজাতি মানুষের হস্তক্ষেপের বাইরে রয়েছে ও উহারা নিজ অস্তিত্ব বজায় রাখছে।

  •  জীববৈচিত্র্যের উষ্ণকেন্দ্র বা বায়োডাইভারসিটি হটস্পটের সংখ্যা-

নর্ম্যান মায়ারস (Norman Myers) প্রথমে সারা বিশ্বে 10 টি “হটস্পট” (Hotspot) এর কথা বলেন (1988)। পর তিনি আরো 8 টি “হটস্পট” (Hotspot)  যোগ করেন এবং বিশ্বে হটস্পটের সংখ্যা বেড়ে 18 হয় (1990)। পরবর্তীকালে “হটস্পট” (Hotspot) নির্ধারণের ভিত্তির উপর নির্ভর করে প্রথমে 7 টি (1999) এবং পরে 9 টি “হটস্পট” (Hotspot) যুক্ত করার ফলে বিশ্বে মোট হটস্পটের সংখ্যা 34 পর্যন্ত বিস্তৃত হয় (2004)। বর্তমান পৃথিবীতে মোট “হটস্পট” (Hotspot) এর সংখ্যা 36 টি। যা পৃথিবীর মূল ভূভাগের মাত্র 1.4% এলাকা দখল করে থাকলেও এখানেই উদ্ভিদ প্রজাতির 44% এবং পাখি, স্তন্যপায়ী, সরীসৃপ ও উভচর মিলিয়ে প্রায় 35% প্রজাতির বাস।

বর্তমানে পৃথিবীর 36 টি “হটস্পট” (Hotspot) আছে। যেগুলি 5 টি জীব ভৌগোলিক অঞ্চলে (Biogeographical regions) বিভক্ত। এগুলি হলো–


A.     আফ্রিকা- এখানে 8 টি জীববৈচিত্র্যের হটস্পট আছে।

1.    মাদাগাস্কার

2.    সাকুলেন্ট কারু

3.    কেপ প্রদেশ

4.    পশ্চিম আফ্রিকার জঙ্গল

5.    পূর্ব আফ্রিকার উপকুলবর্তী অরন্যাঞ্চল

6.    আফ্রিকার হর্ণ অঞ্চল

7.    ইস্টার্ন আফ্রোমন্টেন

8.    ম্যাপুটাল্যান্ড-পোন্ডল্যান্ড-আলবানি

B.      এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল- এখানে 14 টি জীববৈচিত্র্যের হটস্পট আছে।

9.    সুন্ডাল্যান্ড

10. ওয়ালাসিয়া

11. ইন্দো-বার্মা

12. ফিলিপিনস

13. দক্ষিণ-মধ্য চিন

14. পশ্চিমঘাট পর্বতমালা ও শ্রীলঙ্কা

15. দক্ষিণ-পশ্চিম অস্ট্রেলিয়া

16. নিউ ক্যালিডোনিয়া

17. নিউজিল্যান্ড

18. পলিনেশিয়া-মাইক্রোনেশিয়া

19. হিমালয়

20. জাপান

21. ইস্ট মেলানেশিয়া আইল্যান্ড

22. পূর্ব অস্ট্রেলিয়ার বনাঞ্চল

C.    ইউরোপ ও মধ্য এশিয়া- এখানে 4 টি জীববৈচিত্র্যের হটস্পট আছে।

23. ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল

24. ককেশাস

25. মধ্য এশিয়ার পার্বত্য অঞ্চল

26. দ্য ইরানো-আনাতোলিয়ান

D.   উত্তর ও মধ্য আমেরিকা- এখানে 5 টি জীববৈচিত্র্যের হটস্পট আছে।

27. ক্যালিফোর্নিয়া

28. ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ

29. মেসো আমেরিকা

30. উত্তর আমেরিকার উপকূলীয় সমভূমি

31. ম্যাড্রিয়ান পাইন ওক উডল্যান্ডস

E.    দক্ষিন আমেরিকা- এখানে 5 টি জীববৈচিত্র্যের হটস্পট আছে।

32. ব্রাজিলের আটলান্টিক জঙ্গল

33. ক্রান্তীয় আন্দিজ

34. ব্রাজিলীয় সেরাডো (সবচেয়ে সমৃদ্ধতম)

35. মধ্য চিলি

36. তুমবেস-চোকো-ম্যাগডেলেনা

v ভারতে জীববৈচিত্র্যের হটস্পট 4 টি-

(i)           পূর্ব হিমালয়- উত্তর-পূর্ব নেপাল, ভূটান, দক্ষিণ-পশ্চিম চিন ও হিমালয়ের পূর্ব অংশ।

(ii)      পশ্চিমঘাট ও শ্রীলঙ্কা

(iii)       ইন্দোবার্মা- পূর্ব বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়া, ব্রহ্মপুত্র নদের দক্ষিণে উত্তর- পূর্ব ভারত পর্যন্ত।

(iv)        সুন্ডাল্যান্ড- ভারতের আন্দামান ও নিকোবর অঞ্চল নিয়ে গঠিত।

 

3. জীবভোগলিক অঞ্চল (Biogeographical regions):-

বিভিন্ন প্রজাতির জীব, তাদের বসাবস এলাকা এবং বাস্তুতন্ত্র অনুসারে যে অঞ্চল নির্ধারণ করা হয় তাকে জীবভোগলিক অঞ্চল (Biogeographical regions) বলে।

         

ভারতে দশটি জীব ভোগলিক অঞ্চল (Biogeographical regions) আছে। যথা –

1. ট্রান্স হিমালয় অঞ্চল (Trans Himalayan Region)

2. হিমালয় অঞ্চল (Himalayan Region)

3. ভারতীয় মরু অঞ্চল (Indian Desert Zone)

4. সেমি-এরিড অঞ্চল বা শুষ্ক অঞ্চল (Semi Arid Region)

5. পশ্চিমঘাট পর্বতমালা (Western Ghats)

6. গাঙ্গেয় সমভূমি (Gangetic plains)

7. উত্তর পূর্বাঞ্চল (North East Regions)

8. দাক্ষিণাত্যের মালভূমি (Deccan Plateau)

9. উপকূলীয় অঞ্চল (Coastal Region)

10. আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ (Andaman-Nicobar Islands)

  • ভারতের জীব ভৌগোলিক অঞ্চলগুলির বৈশিষ্ট্য-

ভারতের জীব ভৌগোলিক অঞ্চলগুলির বৈশিষ্ট্য সারণিতে দেখানো হল—


জীব ভৌগোলিক অঞ্চল

 

ভৌগোলিক আয়তন

(%)

 

বন্টন

উদ্ভিদ

প্রাণী

পরিবেশ

1. ট্রান্স-হিমালয় অঞ্চলে

ভারতের মোট আয়তনের 5.6%

 

জম্মু-কাশ্মীর,

লাদাখ, উত্তর হিমাচল।

প্রদেশের লাহুল-স্পিটি

 

 

সরলবর্গীয় বৃক্ষের অরণ্য

 

 

 

স্নো-লেপার্ড, বুনো ভেড়া, বুনো ছাগল,

কালো গলা সারস।

শীতল মরুভূমি, ধস ও হিমানী সম্প্রপাতের সমস্যা

আছে।

 

 

2. হিমালয় অঞ্চলে

6.4%

 

6.4%

 

লতা গুল্ম, তৃণভূমি, সরলবর্গীয় বৃক্ষের অরণ্য। পাইন, সিডার, রূপালী ফার, স্প্রুস, ওক, লরেল, রডোডেনড্রন প্রভৃতি গাছ।

 

 

 

 

(i) বাঁকানো শিং যুক্ত ভেড়া, (ii) পাকানো শিং ওয়ালা ছাগল (iii) হিমালয়ান তহর, (iv) মৃগ

পার্বত্য ভূপ্রকৃতি, বছরের অধিকাংশ সময় তুষারবৃত

3. ভারতীয় মরু অঞ্চল

6.6%

পশ্চিম রাজস্থান, কচ্ছ

উদ্ভিদ প্রায় নেই। বিক্ষিপ্ত কাঁটা ঝোপ

নেকড়ে, মরুভূমির বিড়াল, বুনো গাধা, গ্রেট ইন্ডিয়ান বাস্টার্ড, সাপ

অতি উষ্ণ, শুষ্ক, প্রতিকূল পরিবেশ।

4. শুষ্ক অঞ্চল (সেমি-এরিড)

16.6%

পূর্ব রাজস্থান, মহারাষ্ট্র ও কর্ণাটকের বৃষ্টিচ্ছায়া অঞ্চল।

স্বপ্ল উচ্চতার কাঁটা ঝোপ, অ্যাকেসিয়া, খয়ের, বাবলা, নিম

সম্বর, চিতল হরিণ, সিংহ, শেয়াল, নেকড়ে, ক্যারাক্যাল, সাপ

অল্প বৃষ্টিপাত, আপেক্ষিক আর্দ্রতা কম (<50%)

5. পশিমঘাট পর্বতমালা

4.0%

দাক্ষিণাত্য পশ্চিমঘাট পার্বত্য অঞ্চল

বড়ো এলাচ, বুনো কলা, গাম্বোজ হিপটাজ

হাতি, বুনো শুয়োর, শ্লথ ভাল্লুক, গৌর, সাপ

25 টি বায়োডাইভাসির্টি হটস্পট আছে। বাণিজ্যিক ভাবে রবার, কফি, মশলা চাষের জন্য বনভূমি নষ্ট হয়েছে।

6. গাঙ্গেয় সমভূমি

10.8%

উত্ত্রপ্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ

পাতাঝরা গাছের বনভূমি, শাল, কদম, গামার, আম, কাঁঠাল প্রভূতি গাছ।

হাতি, গণ্ডার, মহিষ, খরগোশ, সাপ, ইঁদুর, বক, সাপ।

গড় বৃষ্টিপাত 100-200 সেমি। গ্রীষ্মের শুরুতে গাছ পাতা ঝরায়।

7. উত্তর-পূর্বাঞ্চল

5.2%

অসম, অরুণাচল প্রদেশ, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, মনিপুর, মিজোরাম, ত্রিপুরা

ক্রান্তীয় পর্ণমোচী গাছ, যেমন- শাল, পাদুক, বিজাশাল, বাদাম, শিমুল, আমলকী, কুসুম, জামরুল, বাঁশ

একশৃঙ্গী গণ্ডার (অসম), রেড পান্ডা, গয়াল, ধূসর চিতা, গৌর, সাংগাই, হুলক গিবন, ফেরিস ল্যাংগুর

গড় বৃষ্টিপাত সেমির 150 বেশি, বাঁশ, বেত ও আরোহী উদ্ভিদ দেখা যায়।

8. দাক্ষিণাত্যের মালভূমি

42% (ভারতের বৃহত্তম জীব ভৌগলিক অঞ্চল)

মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, কর্ণাটক, তামিলনাড়ুর বৃশটিচ্ছায়া অঞ্চল

ক্রান্তীয় শুষ্ক পর্ণমোচী গাছ ও ঝোপ জঙ্গল, সেগুন, তেন্ডু, বিজাশাল, পলাশ, অমলতাস, লেন্ডি, হারা, লরেন, শাল, খয়ের প্রভূতি।

চিতল, সম্বর, নীলগাই, চৌশিঙ্গা, বাকিং ডিয়ার, হাতি, বুনো মোষ।

গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাত 100 সেমি বা তার কম। গাছের ঘনত্ব কম, সূর্যলোক অরণ্যের তলদেশে প্রবেশ করতে পারে।

9. উপকূলীয় অঞ্চল

2.5%

গঙ্গা, মহানদী, গোদাবরী, কৃষ্ণা ও কাবেরী নদীর বদ্বীপ।

গোরান, গেওয়া, হোগলা, ভেন্ডি, গোলপাতা, বেত সুন্দরী।

মাছ, কুমির, বাঘ, হরিণ, বক, সাপ, এছাড়া প্রায় 250 রকমের পাখি।

ম্যাংরোভ অরন্য, প্রবাল প্রাচীর ও সামুদ্রিক অ্যানজিওস্পার্ম বা গুপ্তবীজী উদ্ভিদ। 

 

10. আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ

0.3%

আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ

চিরসবুজ ক্রান্তীয় বনভূমি, গর্জন, পাদুক, সাদা চুগলাম, বুর বা বার, রুদ্রাক্ষ, ধুপ

সম্বর, বাকিং ডিয়ার, হাতি, প্রজাপতি, হর্নবিল, পায়রা, দুগং সাপ।

ভারতের মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন, আলাদা বাস্তুতন্ত্র।

 

 


4. জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণ

  • জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণ এর পদ্ধতি- যে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে জীবকূলকে সুষ্ঠুভাবে রক্ষণাবেক্ষণ এবং পরিমিত ব্যবহার দ্বারা বর্তমান প্রজন্মের চাহিদা মিটিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ করা হয় কাকে জীব বৈচিত্র সংরক্ষণ বলে।

জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের পদ্ধতি (Biodiversity Conservation Approach)


 


 

·        অন্যান্য ইনসিটু পদ্ধতি-

জাতীয় ভূমিব্যবহার নীতি

সংরক্ষণ পরিকল্পনা

অসংখ্য আবাসস্থলের ব্যবস্থাপনা

ক্ষতিগ্রস্ত বাস্তুক্ষেত্রের সংস্কার

প্রজাতীয় বাস্তুতন্ত্র সংরক্ষীয় আইন বিনোদনমূলক শিকার

সংরক্ষিত জীবমণ্ডল

বাস্তু তন্ত্রের সংযোজন পথের ব্যবস্থাপনা

সর্বোপরি মনুষ্য সচেতনতা

i. ইন-সিটু সংরক্ষণ:- 

    জীবকূলকে তার স্বাভাবিক বাসস্থানের মধ্যে সংরক্ষণ করা হলে, তাকে ইনসিটু সংরক্ষণ বলে। অর্থাৎ কোন বিপন্ন প্রজাতিকে নিজ বাসস্থানে সংরক্ষণ করার পদ্ধতি হল ইনসিটু সংরক্ষণ

           "Insitu reservation is the process of protecting and endangered plant or animal species in its natural habitat".

National Park
National Park


·        ইন-সিটু সংরক্ষণের বৈশিষ্ট্য–

এই সংরক্ষণে একটি বা একই প্রজাতির জীবকূল সংরক্ষণ করা হয় না।

জানা অজানা সকল উদ্ভিদ ও প্রাণীকূল সংরক্ষণ করা হয়।

এক্ষেত্রে সমগ্র বাস্তুতন্ত্রটিকে সংরক্ষণ করা হয়।

এক্ষেত্রে খাদ্য শৃঙ্খল স্বাভাবিক থাকে, তাই জীবকূলের অসুবিধা হয় না।

এই সংরক্ষণে জীববৈচিত্র্য ধ্বংসকারী উপাদানগুলিকে চিহ্নিত করা যায় ও উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব।

জীব বৈচিত্র্যের কৃত্রিম বাসস্থান নির্মাণের প্রয়োজন হয় না।

সংরক্ষিত স্থানে বেশি মানুষের প্রবেশের অনুমতি থাকে না।

পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা যায়।

 

ইন-সিটু সংরক্ষণের সুবিধা–

      সকল উদ্ভিদ ও প্রাণীকূলের সংরক্ষণ করা হয়।

কোন প্রজাতির সংরক্ষণের সহজ উপায় হল, তারা যে বাসস্থানে জন্মায় সেখানে যথাযথ সংরক্ষণের ফলে এই প্রজাতির সঙ্গে সম্পর্কিত বহু প্রজাতি সংরক্ষিত হয়।

একটি প্রজাতি কেবল একটি বাস্তুতন্ত্রের অংশ নয়, আশেপাশের বহু প্রজাতিকে বাঁচাতে সাহায্য করে।

এই সংরক্ষণে কোন প্রজাতি বাঁচার জন্য প্রতিযোগিতা করার দক্ষতা অর্জন করে।

জীব বৈচিত্র্যের তালিকাভুক্ত হয়নি, পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়নি এমন দেশে এই সংরক্ষণ জরুরি।

আবিষ্কৃত প্রজাতি যেসব অঞ্চলে রয়েছে সেখানে এই সংরক্ষণের প্রয়োজন জরুরি।

যেসব বীজ শুকিয়ে সীড ব্যাঙ্কে রাখলে অঙ্কুরিত হয় না সেক্ষেত্রে এই পদ্ধতি খুব জরুরী।

·        ইন-সিটু সংরক্ষণ পদ্ধতি-

a. জাতীয় উদ্যান (National Park) - জীব বৈচিত্র্য ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে এক বা একাধিক বাস্তুতন্ত্রের অধীনে যে বিশাল সংরক্ষণাগার গড়ে তোলা হয়, তাহা জাতীয় উদ্যান। কেন্দ্রীয় সরকারের নিজস্ব তত্ত্বাবধানে জীববৈচিত্র ও বন্য প্রাণী সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে গঠিত। এই উদ্যান স্থাপনে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রক্ষা দ্বারা শিক্ষা, বিজ্ঞান, গবেষণা ও বিনোদন ক্ষেত্রের উন্মেষ ঘটানো হয়।

পৃথিবীতে জাতীয় উদ্যান (National Park) এর সংখ্যা প্রায় 4000 টি। ভারতে 105 টি এবং পশ্চিমবঙ্গে 6 টি জাতীয় উদ্যান (National Park) আছে। ভারতের প্রথম জাতীয় উদ্যানটি হল উত্তরাখণ্ডের জিম করবেট ন্যাশনাল পার্ক (1936) পূর্বে এর নাম ছিল হ্যালি ন্যাশনাল পার্ক। পৃথিবীর প্রথম জাতীয় উদ্যান (National Park) হল আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ইয়োলোস্টোন ন্যাশনাল পার্ক। পৃথিবীর বৃহত্তম জাতীয় উদ্যান (National Park) হল নর্থ ইস্ট গ্রীনল্যান্ড ন্যাশনাল পার্ক।

উদাহরণ:- পৃথিবীর কয়েকটি উল্লেখযোগ্য জাতীয় উদ্যান (National Park) হল- সেরেনগেটি (তানজানিয়া), গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র), ইয়োলোস্টোন ন্যাশনাল পার্ক (আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র), কাকাদু (অস্ট্রেলিয়া) প্রভূতি। ভারতে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য জাতীয় উদ্যান (National Park) হল- জিম করবেট ন্যাশনাল পার্ক (উত্তরাখণ্ড), হেমিস ন্যাশনাল পার্ক (জম্মু ও কাশ্মীর, এটি আয়তনে সবথেকে বড়ো ন্যাশনাল পার্ক), কানহা ন্যাশনাল পার্ক (মধ্যপ্রদেশ), কাজিরাঙ্গা ন্যাশনাল পার্ক (আসাম), সেলিম আলি ন্যাশনাল পার্ক (গোয়া), গির ফরেস্ট ন্যাশনাল পার্ক (গুজরাট), সুলতানপুর ন্যাশনাল পার্ক (হরিয়ানা), রাজিব গান্ধী ন্যাশনাল পার্ক (কর্নটক), সাইলেন্ট ভ্যালি ন্যাশনাল পার্ক, পেরিয়ার ন্যাশনাল পার্ক (কেরালা), রনথম্বোর ন্যাশনাল পার্ক (রাজস্থান), কানু ন্যাশনাল পার্ক (মহারাষ্ট্র, এটি নতুন ন্যাশনাল পার্ক) প্রভূতি। পশ্চিমবঙ্গের ন্যাশনাল পার্কগুলি হল- বক্সা ন্যাশনাল পার্ক, সুন্দরবন ন্যাশনাল পার্ক, গরুমারা ন্যাশনাল পার্ক, নেওয়া ন্যাশনাল পার্ক, সিঙ্গালিয়া ন্যাশনাল পার্ক, জলদাপাড়া ন্যাশনাল পার্ক।

 

b. অভয়ারণ্য (Sanctuary)- 1972 খ্রিস্টাব্দে ভারতের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের আইন অনুসারে কোন অরন্যের বন্যপ্রাণী, জীবাশ্ম, বাস্তুতন্ত্র সংরক্ষণ করা হলে তাকে অভয়ারণ্য বলে। এটি সংরক্ষিত বনভূমির অংশ এবং রাজ্য সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন। বন্য প্রাণী হত্যা, শিকার এখানে নিষিদ্ধ।

           ভারতে বর্তমানে অভয়ারণ্য রয়েছে 552 টি। যার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে আছে 15 টি। ভারতে বর্তমানে অভয়ারণ্যগুলির মধ্যে53 টি ব্যাঘ্র প্রকল্প রয়েছে।

উদাহরন- গরুমারা টাইগার রিজার্ভ (পশ্চিমবঙ্গ), পালামৌ (ঝাড়খন্ড), কেওলাদেও বার্ড রাজস্থান (ভরতপুর),‌ Wild ass Sanctunary (গুজরাট নারগু), Wildlife Sanctuary  (অরুণাচল প্রদেশ) প্রভূতি।

c.       সংরক্ষিত বনাঞ্চল (Reserve Forest)- রাজ্য সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন যে অরণ্যে সাধারণের প্রবেশ নিষেধ কিন্তু গবেষণার কাজে প্রবেশ করা যায়, তাকেই সংরক্ষিত বনাঞ্চল বলে।

উদাহরণ- পালানি হিলস (তামিলনাড়ু)

d. বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ (Biosphere Reserves)- যেখানে কোন বিপন্ন প্রজাতির বা গোষ্ঠীর প্রাণী অথবা উদ্ভিদকে তাদের জীবনধারা অনুযায়ী সুদীর্ঘকাল ধরে সুরক্ষিত করা যায়, তাকে বলে বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ (Biosphere Reserve)। বর্তমানে ভারতে বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ (Biosphere Reserves)-এর সংখ্যা 18 টি এবং পশ্চিমবঙ্গে 1 টি। পৃথিবীতে Biosphere Reserves- এর সংখ্যা 727 টি।

Biosphere Reserves in india
Biosphere Reserves in india


বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ তিনটি অঞ্চল বা অংশ থাকে-

  i. কেন্দ্রীয় অঞ্চল বা Core Zone -

এর কেন্দ্রভাগে জীবকূল ও বাস্তুতন্ত্র অতিমাত্রায় সুরক্ষিত থাকে।

এখানে মানুষের ক্রিয়া-কলাপ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

পরিবেশ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র ছাড়া আর কিছুর জন্য অনুমোদন দেওয়া হয় না।

এটি অত্যন্ত কঠোর ভাবে নিয়ন্ত্রিত, পরিচালিত।

আইনগতভাবে সংরক্ষিত।

  ii. বাফার জোন (Buffer zone)/আঘাত নিবারণী অঞ্চল -

কেন্দ্রীয় অঞ্চলকে বেষ্টন করে থাকা এটি মধ্যবর্তী অঞ্চল।

এখানে শিক্ষা গবেষণামূলক কাজকর্ম, প্রশিক্ষণকেন্দ্র, পর্যটন কেন্দ্র ইত্যাদির অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু মানুষের অর্থনৈতিক কাজকর্ম নিষিদ্ধ।

অনুমোদিত ক্রিয়া-কলাপ গুলির উপর কঠোর নজরদারি থাকে। তবে ব্যাঘ্র সংরক্ষণ এলাকার ক্ষেত্রে 2013 খ্রিস্টাব্দে সুপ্রিমকোর্ট মানুষের যাতায়াত নিষিদ্ধ করেছে।

  iii. অন্তর্বর্তী এলাকা বা (Transitional Zone)-     

এটি সংরক্ষিত জীবমন্ডলের সবচেয়ে বাইরের অংশ।

এখানে প্রথাগত ভূমি ব্যবহার অনুমোদিত হয়।

       স্থায়ী বাসিন্দাদের বসতি, পর্যটন শিল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়।

 

উদাহরন- সুন্দরবন (পশ্চিমবঙ্গ), নন্দাদেবী (উত্তরাখণ্ড), নীলগিরি (তামিলনাড়ু, কর্ণাটক, কেরালা), নকরেক (মেঘালয়) প্রভূতি।

বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ তিনটি অঞ্চল বা অংশ
বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ তিনটি অঞ্চল বা অংশ 



                                                                                             

ii. এক্স-সিটু সংরক্ষণ:- 

    লুপ্তপ্রায় বা সংকটময় জীব বৈচিত্র্যকে তাদের নিজ স্বাভাবিক বাসস্থানের বাইরে অন্য কোন অনুকূল পরিবেশে সংরক্ষণ করাকে এক্স-সিটু সংরক্ষণ বলে।

            "Ex-situ Reservation is the - Process of protecting and endangered plant or animal species outside of its natural habitat"

এক্স-সিটু সংরক্ষণ
এক্স-সিটু সংরক্ষণ


·        এক্স-সিটু সংরক্ষণের বৈশিষ্ট্য-

এই সংরক্ষণে লুপ্তপ্রায় প্রজাতির সংরক্ষণ গুরুত্ব পায়।

বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে লুপ্তপ্রায় প্রজাতির সংখ্যা বাড়ানো হয়।

এক্ষেত্রে প্রজাতির স্বাভাবিক বিবর্তন ঘটে না।

এই সংরক্ষণ দ্বারা অসংখ্য প্রজাতি সংরক্ষণ হলেও তাদের মধ্যে খাদ্যশৃঙ্খল গড়ে ওঠে না।

এই সংরক্ষণে শিক্ষা ও গবেষণার ওপর জোর দেওয়া হয়।

কৃত্রিম উপায়ে জিন, বীজ, শুক্রাণু সংরক্ষিত হয়।

অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র অঞ্চলে কৃত্রিমভাবে তৈরি পরিবেশে এই সংরক্ষণ পদ্ধতি গড়ে তোলা হয়।

·        এক্স-সিটু সংরক্ষণ পদ্ধতি-

a. বোটানিক্যাল গার্ডেন বা উদ্ভিদ উদ্যান-  একটি উদ্ভিদ উদ্যান হচ্ছে কঠোরভাবে সংরক্ষিত একটি গ্রামীণ সবুজ এলাকা, যেখানে একদল কর্মী বাগান রক্ষণাবেক্ষণ করে, জীবন্ত ও সংরক্ষিত উদ্ভিদের রক্ষণাবেক্ষণ করে, গবেষণা ও অধ্যয়ন, প্রদর্শন ও মানবকল্যাণের জন্য এসব উদ্ভিদের বংশগতির কার্যকরী একক সংরক্ষণ করে। উদ্ভিদ উদ্যান হতে পারে একটি স্বাধীন সংস্থা, একটি সরকারি প্রকল্প, অথবা কোন কলেজ কিংবা কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী সংস্থা। বিশ্বজুড়ে প্রায় 1800 টি উদ্ভিদ উদ্যান আছে। ভারতে প্রায় 36 টি বোটানিক্যাল গার্ডেন বা উদ্ভিদ উদ্যান আছে।       

বিভিন্ন গাছ সংরক্ষণের ব্যবস্থা হল বোটানিক্যাল গার্ডেন ও                     বায়োলজিক্যাল পার্ক।

এখানে লুপ্তপ্রায় গাছগুলিকে বেশি নজর দেওয়া হয়।

বিপন্ন ও বিরল প্রজাতির উদ্ভিদকে কৃত্রিম প্রজনন দ্বারা সংরক্ষণ করা         হয়।            

সারাবিশ্বে 1600 উদ্ভিদ উদ্যানে 80,000 বিপন্ন উদ্ভিদ প্রজাতির, 80 লক্ষ উদ্ভিদ সংরক্ষণ করা হয়।

·        উদাহরণ -

i. পৃথিবীর বৃহত্তম বোটানিক্যাল গার্ডেন হল- ইংল্যান্ডের "দি রয়েল বোটানিক্যাল গার্ডেন"(1759)।

ii. এশিয়ার তথা ভারতের বৃহত্তম বোটানিক্যাল গার্ডেন হল- শিবপুর বোটানিক্যাল গার্ডেন (আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু)।

b. চিড়িয়াখানা- যেখানে বন্য প্রাণী বন্দী অবস্থায় সংরক্ষণ ও গবেষণার জন্য রাখা হয় তাকে চিড়িয়াখানা বলে।

ডিম সংগ্রহ, আবদ্ধ প্রজনন, কৃত্রিম নিষেক, ক্লোনিং দ্বারা বিপন্ন ও বিরল প্রজাতির প্রাণীর বাচ্ছা তৈরি।

নবজাতক বাচ্চাগুলোকে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে নিজ বন্য পরিবেশে ফিরিয়ে দেওয়া।

বিরল প্রজাতির প্রাণীর জনসংখ্যা বৃদ্ধি।

বিপন্ন প্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্র ও মানুষের দৃষ্টি নন্দনীয় বিনোদন।

উদাহরণ- ভারতের বৃহত্তম চিড়িয়াখানা কলকাতার আলিপুর।

c. জিন ব্যাংক- বিজ্ঞানসম্মতভাবে বীজ, শুক্রাণু সংগ্রহ ও সংরক্ষণ এবং টিস্যু কালচারের ব্যবস্থা হল জিন ব্যাংক।

জীব দেহের বিভিন্ন অংশকে জিন ভান্ডরে রেখে বিপন্ন জীবপ্রজাতির জন্মগত বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণ।

উদ্ভিদের ক্ষেত্রে বীজ,পরাগরেণু,কন্দো, DNA, RNA, বিশেষ বিশেষ দেহ কলাকে হিমায়িত ও শুষ্ক পরিবেশে সংরক্ষণ করা হয়।

উদাহরণ-

সারাবিশ্বে 60,000 শস্য প্রজাতির একটি জিন ভান্ডার গড়ে উঠেছে।

ভারত - মার্কিন প্রকল্পের অধীনে 1988 খ্রিস্টাব্দে ভারতে একটি জিন ভান্ডার গড়ে উঠেছে।

ভারতে National Bureau of Plant Genetic Resource (NBPGR) -উদ্ভিদ কলা গবেষণাগার।

d. ক্রায়ো সংরক্ষণ- পরাগরেণু, বীজ, গাছের অংশকে (-96 ডিগ্রী সেলসিয়াস) তাপমাত্রায় তরল হাইড্রোজেন সংরক্ষণ করার পদ্ধতিকে ক্রায়ো সংরক্ষণ বলে।

e. জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং- জীবের জিনগত পরিমাণের পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করে আরো বেশি মনুষ্য কল্যাণকর কাজে লাগানোর প্রযুক্তিগত পদ্ধতি। এক্ষেত্রে DNA সংযোজন ও জিন ছেদন করা হয়।

 

5. জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এর তাৎপর্য:-

জীব বৈচিত্র্যের উপাদানসমূহ যেমন বাস্তুতান্ত্রিক ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তেমনি মানুষের প্রয়োজনীয় সকল প্রকার জৈব উপাদান সরবরাহ করে মানুষের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখে।নিম্নলিখিত পরিবেশগত উপাদানগুলির অস্তিত্ব বা স্থায়িত্ব বজায় রাখার জন্য জীববৈচিত্র্য তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এর তাৎপর্য


i. ভৌমজল ভান্ডারের স্থিতিশীলতা ও জলচক্রের ক্রিয়াশীলতা- বনভূমি জলচক্রের ক্রিয়াশীলতা এবং ভৌমজলের স্থিতিশীলতা বজায় রাখে, বন্যা ও খরার হাত থেকে পরিবেশকে রক্ষা করে এবং মৃত্তিকায় জলের পরিমাণকে নিয়ন্ত্রণ করে। তাই পৃথিবীর জল সংরক্ষণে জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণ বিশেষ প্রয়োজন। জীববৈচিত্র্য হ্রাস পেলে ভৌম জলস্তর অধোগামী হয়। উদ্ভিদ ও প্রাণীকূল  উপস্থিতি যেমন ভৌমজল স্তর পূরণে সাহায্য করে, তেমনি উদ্ভিদকূল প্রস্বেদন প্রক্রিয়ায় মৃত্তিকাস্থিত  জল বায়ুমন্ডলে স্থানান্তরিত করে। ফলে উদ্ভিদ জলচক্র সচল রাখতে সাহায্য করে।

ii. মৃত্তিকার গঠন ও সংরক্ষণ- জীববৈচিত্র্য মৃত্তিকা গঠনে ও সংরক্ষণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হলে মৃত্তিকার গুণগত মানের অবনমন ঘটে এবং মৃত্তিকা ক্ষয় দ্রুত হয়। উদ্ভিদের দেহাবশেষ মৃত্তিকায় জৈব পদার্থ সরবরাহ করে মৃত্তিকা গঠনে সাহায্য করে। অরণ্যের আচ্ছাদন মৃত্তিকাকে ক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করে।

iii. জলবায়ুর স্থিতিশীলতা- অরণ্য অঞ্চলের উদ্ভিদ বাষ্পমোচনের  ফলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণকে নিয়ন্ত্রণ করে। এই অঞ্চলের জলচক্রের স্থিতিশীলতা বজায় রাখে। বর্তমানে নানান রকম অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপের  ফলে বনভূমি হ্রাস পাচ্ছে। ফলে বায়ুমন্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে যা বিশ্ব উষ্ণায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উষ্ণায়নের ফলে বাস্তুতন্ত্রের অবস্থানগত পরিবর্তন ঘটে। জলবায়ুগত পরিবর্তনের ফলে জুরাসিক যুগে ডাইনোসর জাতীয় প্রাণীদের অবলুপ্তি ঘটে।

iv. দূষক পদার্থের বিয়োজন ও শোষণ- উদ্ভিদকূল বায়ুমন্ডলে ভাসমান ধূলিকণা শোষণ করে বায়ুমন্ডলেকে নির্মল রাখে। বজ্য পদার্থ, আবর্জনা, তৈল জাতীয় পদার্থ প্রভৃতি বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য নষ্ট করে। বাস্তুতন্ত্রে  উপস্থিত আণুবীক্ষণিক  জীবগুলি দূষক পদার্থের বিয়োজন ঘটিয়ে আত্মসাৎ করে। এই বিষয়ে জলাভূমির ভূমিকা অপরিসীম। জলাভূমি দূষক পদার্থের বিভাজন ও শোষণ করে বজ্য জল পরিশ্রুত করে। জৈব অক্সিজেনের  চাহিদা হ্রাস করে এবং ক্ষতিকারক আণুবীক্ষণিক জীবগুলিকে ধ্বংস করে।

v. পুষ্টি মৌলের সঞ্চয় ও চক্রাকার আবর্তন- জীব-বৈচিত্র্য পুষ্টিমৌলের সঞ্চয় ও চক্রাকার আবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জীববৈচিত্র্যের অনুপস্থিতিতে পুষ্টিমৌলের চক্রাকার আবর্তন  ব্যহত হয়। মৃত্তিকায় উপস্থিত আণুবীক্ষণিক জীবগুলি জৈব দেহাবশেষের বিশ্লেষণ ঘটায়। ফলে উদ্ভিদের অণুখাদ্যগুলি মাটিতে ফিরে আসে। একটি বিশেষ ধরনের আণুবীক্ষণিক জীব দ্বারা একটি বিশেষ ধরনের অণু খাদ্য মাটিতে যুক্ত হয়। যেমন- রাইজোবিয়াম মাটিতে নাইট্রোজেন যুক্ত করে। তাই মৃত্তিকায় পুষ্টিমৌলের সঞ্চয় ও চক্রাকার আবর্তনের ক্ষেত্রে আণুবীক্ষণিক জীবসমূহের প্রজাতিগত বৈচিত্র্য বিশেষ প্রয়োজন।

vi. সম্পদ সংরক্ষণ- পৃথিবীর সমস্ত প্রাণীকূল খাদ্যের জন্য উদ্ভিদের ওপর নির্ভরশীল। তাই, উদ্ভিদজগতের বৈচিত্র্যরক্ষার মাধ্যমেই পৃথিবীর মোট খাদ্যের চাহিদা মেটানো সম্ভব। মানুষের মোট খাদ্যের চাহিদার 40 শতাংশ আসে মাত্র 20টি  প্রজাতির উদ্ভিদ থেকে। এছাড়াও কয়েকটি প্রাণী খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় 70,000 জীব প্রজাতি মানুষের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

আয়ুর্বেদীয় চিকিৎসায় উদ্ভিদের ভেষজগুণকে কাজে লাগানো হয়। ভেষজ উপাদানকে পাথেয় করে বহু এলোপ্যাথিক ঔষধ প্রস্তুত করা হয়। যথা- সিঙ্কোনা গাছ থেকে কুইনাইন, দ্রাক্ষালতা থেকে লিউকেমিয়া রোগের ঔষধ প্রস্তুত করা হয়। পৃথিবীতে ব্যবহৃত ঔষধের  প্রায় 40 শতাংশ আসে উদ্ভিদ ও প্রাণীজগৎ থেকে। ভবিষ্যতে আরও গবেষণার ফলে বহু প্রকার ঔষধের সন্ধান পাওয়া যাবে বৈচিত্র্যময় জীবজগৎ থেকে। তাই জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণ আশু প্রয়োজন।

 

6. জীব বৈচিত্রের বিনাশ বা অবক্ষয়ের কারণ (Causes of Destruction or loss of Biodiversity):-

বিভিন্ন কারণে জীব বৈচিত্র্যের বিনাশ ঘটতে পারে। এই সব কারণকে দুটি মূল শ্রেণীতে ভাগ করে আলোচনা করা যায়।

 

জীব বৈচিত্রের বিনাশ বা অবক্ষয়ের কারণ
Causes of Destruction or loss of Biodiversity

A. প্রাকৃতিক কারণ (Natural Causes)

i. জলবায়ুর পরিবর্তন- বিভিন্ন যুগে বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য বহু প্রজাতির বিনাশ ঘটেছে। বেশিরভাগ সময় পরিবর্তনশীল জলবায়ুর সঙ্গে প্রজাতিগুলো অভিযোজন করতে না পারায় বিলুপ্ত হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাস্তুতান্ত্রিক পরিবেশের বিপুল পরিবর্তন হওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় । কার্বনিফেরাস ও প্লিস্টোসিন যুগে সমগ্র পৃথিবী বরফাবৃত থাকায় অসংখ্য প্রজাতি নিশ্চিহ্ন হয়েছে।

ii. অগ্নুৎপাত- অগ্ন্যুৎপাতের সময় যথেষ্ট মাত্রায় লাভা প্রবাহের ফলে বহু উদ্ভিদ ও প্রাণী উত্তপ্ত লাভার মধ্যে ঢাকা পড়ে যায়। এর ফলে অসংখ্য প্রজাতি বিলুপ্ত হয়। ক্রিটেশিয়াস যুগে অগ্ন্যুৎপাতের ফলে অসংখ্য প্রজাতি বিনাশের সন্ধান পাওয়া যায়।

iii. ধুমকেতু- মহাকাশ থেকে আগত গ্রহাণু বা উল্কা ভূ-পৃষ্ঠে আছড়ে পড়লে যে বিপুল পরিমাণ ধূলিকণা সৃষ্টি হয়, তাতে বহু প্রজাতির ক্ষতি হয়। ধূলিকণার আবরণ ভূপৃষ্ঠে সূর্যালোক পৌঁছাতে বাধা দেয় বলে বিপুল সংখ্যক প্রজাতি বিনষ্ট হয় অর্থাৎ জীব বৈচিত্র্যের বিনাশ ঘটে।

iv. মহীসঞ্চরণ -মহাদেশীয় ভূখণ্ডের সঞ্চরণ ঘটায় বাসস্থানের খন্ডীকরণ ঘটে। এর ফলে প্রজাতি বিনাশের সম্ভবনা বাড়ে। পাত সঞ্চালনের ফলে বিভিন্ন ভূতাত্ত্বিক যুগে ভূখণ্ডের সঞ্চরণ ঘটায় বহু প্রজাতির বিনষ্টের নমুনা পাওয়া যায়।

v. বন্যা খরা ও মহামারি- বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে যখন বন্যা ,খরা বা  মহামারির সৃষ্টি হয় তখনও প্রজাতি বিনষ্ট হয়। বিভিন্ন রোগের প্রাদূর্ভাব বাড়লে মহামারির সৃষ্টি হয় এবং তা বাস্তুতন্ত্রের স্বাভাবিক বিন্যাসকে ব্যাহত করায় জীববৈচিত্র্যের বিনাশ ঘটে।

B. মনুষ্যসৃষ্ট কারণ (Man Made Causes)

প্রাকৃতিক কারনে সঙ্গে সঙ্গে মনুষ্যসৃষ্ট কারণ ও জীববৈচিত্র্য বিনাশে সাহায্য করে। প্রকৃতপক্ষে মনুষ্যসৃষ্ট কারণ এর জন্যই জীববৈচিত্র্য বর্তমানে এক মহা সংকটের সম্মুখীন হয়েছে। উল্লেখযোগ্য এসব কারণ গুলি হল –

i. বৃক্ষছেদন- ব্যাপকমাত্রায় বৃক্ষ ছেদনের জন্য উদ্ভিদ ও জীবজন্তুর আবাসস্থলের এলাকা হ্রাস পায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিশেষ বিশেষ বৃক্ষ বিশেষ জীবের আশ্রয়স্থল। সেই সব গাছ কাটার জন্য বিশেষ বিশেষ প্রজাতি বিলুপ্তির পথে এগিয়ে চলেছে। মূলত উদ্ভিদের ওপর নির্ভর করেই অসংখ্য উদ্ভিদ ও প্রাণী নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখে। হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল, পূর্বঘাট ও পশ্চিমঘাট পার্বত্য অঞ্চলে ব্যাপক ভাবে বনভূমি ধ্বংস হওয়ায় অসংখ্য স্থানীয় বা আঞ্চলিক প্রজাতি নষ্ট হয়েছে।

ii. চোরাশিকার- চোরাশিকারের জন্য প্রতিবছর বহু প্রাণীর মৃত্যু হয়। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে এই সমস্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। হাতির দাঁত ,গন্ডার এবং হরিণের শিং ও চামড়া ইত্যাদি সংগ্রহের জন্য চোরাশিকার উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। চোরাশিকারের  কারণে ভারতে বাঘের সংখ্যা দিনে দিনে হ্রাস পাচ্ছে। এই প্রসঙ্গে রাজস্থানের সরিস্কা অভয়ারণ্যের কথা উল্লেখ করা যায়। যেখানে চোরাশিকারের দাপটে বাঘ পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে গেছে বলে মনে করা হয়।

iii. অতি শিকার- যথেচ্ছ মাত্রায় শিকারের মাধ্যমেও জীব বৈচিত্র্যের অবক্ষয় ঘটছে। অরণ্যের দুর্গম অঞ্চলেও শিকার করে অরণ্যকে পশুশূণ্য করে ফেলা হয়েছে। উদাহরন হিসাবে ক্রান্তীয় বৃষ্টি অরণ্যের কথা বলা যায়। যেখানে রাস্তা তৈরি করে অরণ্যের গভীরে প্রবেশ করে অতিরিক্ত শিকারকার্য চালিয়ে বহু প্রাণী প্রজাতিকে লুপ্ত করা হচ্ছে।

iv. অতিমাত্রায় পশুপালন- কৃষিকাজের ব্যাপক বিস্তার ঘটায় পশুপালনক্ষেত্র বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে। তাই পশুপালকেরা  প্রায়শই অরণ্য অঞ্চলের প্রবেশ করে। অত্যধিক পশুচারণ এর জন্য ছোট গাছ, চারা গাছ, গুল্ম  ইত্যাদি নষ্ট হওয়ায় জীব বৈচিত্র্যের রূপ অবক্ষয় ঘটেছে।

v. আগন্তুক প্রাণীর আক্রমণ- বাইরে থেকে কোন প্রাণীর আগমন এবং আক্রমণ ঘটলে  স্থানীয় জীবসংখ্যার ওপর তার প্রভাব পড়ে। বহিরাগত প্রজাতির অনুপ্রবেশের ফলে স্থানীয় প্রজাতির বিনষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে এবং ফলস্বরূপ জীব বৈচিত্র্যের বিনাশ ঘটে। যেমন জলাশয়ে কুমিরের প্রবেশ, পাখির আশ্রয়ে সাপের প্রবেশ বা উপদ্রব হলে ওই বাসস্থানের নিজস্ব প্রজাতির প্রাণীকূল ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। আফ্রিকার বৃহৎ হ্রদ সমূহের (ভিক্টোরিয়া, মালাউই ও টাঙ্গানিকা) স্থানীয় মৎস্য প্রজাতির মধ্যে নীল পার্চ প্রজাতির মৎস্য সংস্থাপন করায় স্থানীয় মৎস্য প্রজাতি বিনষ্ট হয়েছে।

vi. কৃষি ও বাসভূমি সম্প্রসারণ- অরণ্য ধ্বংস করে কৃষিজমির সম্প্রসারণের  ফলে জীব বৈচিত্র্য নষ্ট হয়। শুধু তাই নয় জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাওয়ায় বাসভূমি নির্মাণের মাধ্যমেও অরণ্য নিধন হয় এবং যার প্রভাব পড়ে জীব বৈচিত্র্যের উপর। উদাহরণ হিসেবে সুন্দরবন এবং আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের কথা উল্লেখ করা যায়। এই দুই জায়গায় ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপে বসতি নির্মাণ বা পুনর্বাসন প্রকল্পের মাধ্যমে নির্বিচারে অরণ্যের সংকোচন ঘটায় জীববৈচিত্র্যের ভবিষ্যৎ এক বিশাল প্রশ্নচিহ্নের সম্মুখীন হয়েছে।

vii.  বাস্তুক্ষেত্র বা বাসস্থান হানি- কোন জীবের স্থানীয় পরিবেশকে ওই জীবের বাস্তুক্ষেত্র বলা হয়। অনেক সময় এই বাস্তুক্ষেত্রকে (Habitat) কোন জীবের পরিবেশগত ঠিকানাও বলা হয়। এই পরিবেশ বলতে স্থানীয় জলবায়ু, মৃত্তিকা, ভূপ্রকৃতি, জল, প্রাপ্ত পুষ্টি ইত্যাদিকে বোঝায়। বিভিন্ন কারণে পরিবেশের পরিবর্তন ঘটলে স্বাভাবিকভাবেই জীবের বাস্তুক্ষেত্র সংকোচন ঘটে । ফলস্বরুপ জীববৈচিত্র্য বিনাশের সম্ভাবনাও প্রবলভাবে তৈরি হয়। 

viii. বাস্তুক্ষেত্রের অবনমন- পরিবেশের গুণগত মানের অবক্ষয় ঘটলে বাস্তুক্ষেত্রের অবনমন ঘটে। প্রত্যেক জীবপ্রজাতির সঠিক এবং উপযুক্ত বাস্তুক্ষেত্র অবশ্যই প্রয়োজন। কিন্তু বাস্তুক্ষেত্রের যদি গুণগতমান হ্রাস পায়, তখনই জীব বৈচিত্র্য বিনাশের পথ পরিষ্কার হয়। মাদাগাস্কার দ্বীপের ডোডো পাখি আজ অবলুপ্ত, কারণ সেখানে হঠাৎ শূকরছানাকে এই পাখির ডিম খাওয়ানো শুরু করায় এই বিপত্তি।

ix. বাস্তুক্ষেত্রের খন্ডীকরণ- বাস্তুক্ষেত্রের খন্ডীকরণ বা বিচ্ছিন্নকরণ বর্তমানে জীববৈচিত্র্য টিকে থাকার অন্যতম বাধা। বাস্তুক্ষেত্রের আয়তন খন্ডীকরণ এর মাধ্যমে হ্রাস পেলে বসবাসকারী জীবের খাদ্য সংগ্রহ থেকে শুরু করে অন্যান্য জৈবিক চাহিদা গুলির পূরণ বাধাপ্রাপ্ত হয়। তাই এক্ষেত্রে বিপুল সমৃদ্ধিশালী জীববৈচিত্র্য ও চরম সংকটের দিকে এগিয়ে যায়। কৃত্রিম উপগ্রহ মারফত প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায় ক্রান্তীয় অরন্যের বর্তমান বিস্তৃতি মাত্র 75 থেকে 80 লক্ষ্ বর্গ কিলোমিটার, যা পূর্বে ছিল প্রায় 1.5 কোটি বর্গ কিলোমিটার। অর্থাৎ প্রায় অর্ধেক বনভূমির বিনাশ ঘটেছে। এর ফলে এই অঞ্চলে জীববৈচিত্র্যের মাত্রাও ধীরে ধীরে হ্রাস পেয়েছে।

x. ছদ্ম প্রভাব-  যখন দুই বা ততোধিক প্রজাতি একে অপরের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল হয় তখন বাস্তুতন্ত্রের একটি কেন্দ্রীয় প্রজাতি গড়ে ওঠে ।এই কেন্দ্রীয় প্রজাতি কোন কারণে আক্রান্ত হলে তখন তার ওপর নির্ভরশীল অন্যান্য প্রজাতি গুলির বিনাশের সম্ভবনা বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে একটি প্রজাতির বিনাশের ফলে অন্যান্য প্রজাতির বিলুপ্তির সম্ভাবনা বেড়ে যায় বলে একে ছদ্ম প্রভাব বলা হয়। উদাহরন হিসাবে ওয়াশিংটন উপকূলবর্তী অঞ্চলের তারামাছের কথা উল্লেখ করা যায়। এখানে তারামাছ কেন্দ্রীয় প্রজাতি। তাই তারা মাছের অবলুপ্তি ঘটলে তার ওপর নির্ভরশীল বিভিন্ন প্রজাতির শুক্তির (Mussles) বিলুপ্তি ঘটবে।

    xi. পরিবেশ দূষণ- পরিবেশ দূষণের মাত্রা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বায়ুমন্ডলে গ্রিন হাউস গ্যাস বৃদ্ধির ফলে ভূমণ্ডলীয় উষ্ণতা ও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে বাস্তুতন্ত্রে অত্যধিক পীড়নের সৃষ্টি হয়। রাসায়নিক দূষণের ফলে সংবেদনশীল প্রজাতি গুলি ক্রমশ অবলুপ্তির পথে ঢলে পড়ায় জীব বৈচিত্র্যের বিনাশ ঘটছে। উদাহরণ- দামোদর নদ বর্তমানে একটি জৈবিক মরুভূমিতে (Biological desert) পরিণত হয়েছে । শিল্পজাত দূষক পদার্থ নদীর জলে মিশ্রিত হওয়ায় নদীর বহু জীব অবলুপ্ত হয়েছে।

হ্রদবহুল নরওয়ে ও সুইডেনে অত্যধিক দূষণের ফলে হ্রদের মধ্যেকার বহু প্রজাতি আজ অদৃশ্য হয়েছে । সেই কারণে এই ধরনের হ্রদগুলিকে মৃত হ্রদ বলে (Dead lake। আমেরিকা ও ইউরোপীয় দেশগুলোতে অম্লবৃষ্টিকে হ্রদ ঘাতক (Lake killers) বলা হয়। কারণ এই বৃষ্টির ফলে হ্রদের জীববৈচিত্র্যের বিনাশ ঘটছে।

xii. বহুমুখী নদী পরিকল্পনা রূপায়ণ- নদীতে বাঁধ নির্মাণ করে বহুমুখী নদী উপত্যকা পরিকল্পনার সার্থক রূপায়ণের জন্য বহু ক্ষেত্রে স্বাভাবিক বাস্তুতন্ত্রের বিনাশ এবং বাস্তুক্ষেত্রের আয়তন হ্রাস পায়। জলাধারের অতিরিক্ত জল অনেক সময় পার্শ্ববর্তী স্থলজ বাস্তুসংস্থানকে প্লাবিত করায় জীব-বৈচিত্র্য বিনষ্ট হবার সম্ভাবনা বেড়ে যায় ।

xiii. রোগ পোকার উপদ্রব- কোনো কোনো বাস্তুতন্ত্রের মধ্যে ব্যাপক মাত্রায় রোগ পোকার উপদ্রব ঘটে। এই রোগ পোকার আক্রমণের ফলে বহু ক্ষেত্রে অসংখ্য প্রজাতির বিনাশ ঘটে।

যেমন- ধানের ক্ষেত্রে ক্ষতিকর এক প্রকার ভাইরাসের নাম রাইস গ্রাসি শাল্ট ভাইরাস।

xiv. অতিরিক্ত অর্থনৈতিক ব্যবহার- কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিশেষ প্রকার উদ্ভিদের ব্যবহারিক গুরুত্ব মাত্রাতিরিক্ত হওয়ায় তার সংগ্রহের পরিমাণ অনেকাংশেই বৃদ্ধি পায়। তখন নির্দিষ্ট বাস্তুক্ষেত্রে অবস্থানকারী ঐ উদ্ভিদের পরিমাণ বা সংখ্যা হ্রাস পায় বলে জীব বৈচিত্র্য বিনষ্ট হয়। উদাহরণ হিসেবে বিভিন্ন প্রকার ওষুধ তৈরি হয় এমন ভেষজ উদ্ভিদ যেমন বাসক, কলসপত্রী, সর্পগন্ধা, সিঙ্কোনা ইত্যাদির নাম করা যায়। সুন্দরবন অঞ্চলে সুন্দরী গাছের সংখ্যা ও দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে।

xv. জনসচেতনতার অভাব- উপযুক্ত জনসচেতনতার অভাবের জন্য বিশেষ করে পরিবেশ সচেতনতার অভাবে জীব-বৈচিত্র্য আজ কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন। বর্তমানে বাস্তুতন্ত্রের ওপর মানুষের অবাঞ্চিত হস্তক্ষেপ প্রায়ই চোখে পড়ে। দক্ষিণ ভারতে চন্দন দস্যুর কার্যকলাপে চন্দন বৃক্ষ আজ অবক্ষয়ের মুখে। এভাবে বিভিন্ন সময়ে মানুষের কার্যকলাপে জীববৈচিত্র্য এক সংকটজনক পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে।

 

7. জীব বৈচিত্র্যের গুরুত্ব-

মানব জীবনে জীববৈচিত্র্যের গুরুত্ব অপরিসীম। জীববৈচিত্র্য একদিকে যেমন পরিবেশের ভৌম জলের ভাণ্ডার পূরণে, জলবায়ুর স্থায়িত্ব রক্ষায়, মৃত্তিকার ক্ষয় রোধে, ভৌত রাসায়নিক স্থিতাবস্থায় ও বায়ুর রাসায়নিক গঠন ইত্যাদির স্থিতিশীলতা বজায় রেখে বাস্তুতান্ত্রিক ভারসাম্য রক্ষা করে তেমনি জীববৈচিত্র্য বিভিন্ন জীব-প্রজাতির ধারক ও বাহক হিসেবে কাজ করে। বাস্তুতান্ত্রিক ভারসাম্য ও মানব জীবনের অস্তিত্ব রক্ষায় জীব বৈচিত্র্যের ভূমিকা আলোচনা করা হলো-

ব্যবহারিক গুরুত্ব- মানবজীবনে উদ্ভিদ ও প্রাণীর ব্যবহারিক গুরুত্ব অপরিসীম। মানুষের জীবনে নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় 4 হাজার 500 রকমের দ্রব্য আসে উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতির থেকে। অন্নবস্ত্র ও কর্মসংস্থানের জন্য মানুষ সম্পূর্ণরূপে জীব-প্রজাতির ওপর নির্ভরশীল। বিভিন্ন প্রকার খাদ্যদ্রব্য ওষুধ পানীয়, খেলার সরঞ্জাম, কাগজ, গৃহপালিত পশু প্রভৃতি এসেছে বন্য উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতির থেকে। সবুজ বিপ্লব, শ্বেত বিপ্লব নীল বিপ্লব প্রভৃতি জীব-বৈচিত্র্যের সমৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। বনজ উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতির জিনের পরিবর্তন ঘটিয়ে জিন -পরিবর্তিত খাদ্যদ্রব্য সৃষ্টি করা হয়েছে। তাই খাদ্য দ্রব্যের উৎপাদন বেড়েছে এবং বর্ধিত জনসংখ্যার মুখে প্রয়োজনমতো খাদ্যদ্রব্য তুলে ধরা সম্ভব হয়েছে।

জলবায়ুর স্থায়িত্ব রক্ষায় জীববৈচিত্র্যের গুরুত্ব- আবহাওয়ার বিশুদ্ধকরণ, বৃষ্টিপাত নিয়ন্ত্রণ, জলীয়বাষ্প নির্গমন, অক্সিজেন প্রস্তুত প্রভৃতি কাজে উদ্ভিদ আবহাওয়ার মূল বৈশিষ্ট্য গুলিকে নিয়ন্ত্রণ করে। উদ্ভিদ মাটি থেকে জল শোষণ ও বায়ুতে নির্গমন করায় পৃথিবীর জলচক্রকে সচল রাখতে সাহায্য করে।

ভূপৃষ্ঠস্থ জলের পরিশ্রুতকরণে জীববৈচিত্র্যের গুরুত্ব- কচুরিপানা, বিভিন্ন প্রকার শৈবাল প্রভৃতি জলজ উদ্ভিদ জলাভূমির জলে মিশ্রিত বিভিন্ন হ্মতিকারক ধাতব কণা ও হ্মতিকারক রাসায়নিক পদার্থ শোষণ করে জলকে পরিশ্রুত করে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করে।তাই জলাভূমিকে "প্রকৃতির বৃক্ক বা কিডনি"(Nature's kidney) বলে।

মৃত্তিকা সৃষ্টিতে জীববৈচিত্র্যের গুরুত্ব- মৃত্তিকা সৃষ্টিতে জীববৈচিত্র্যের ভূমিকা অপরিসীম। সৃষ্টির প্রথম পর্যায়ে উদ্ভিদ ও প্রাণী শিলাসমূহ চূর্ণ-বিচূর্ণ করে। এরপর জল ও বায়ুর উপস্থিতিতে বিভিন্ন প্রকার ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, কীটপতঙ্গ, কেঁচো জাতীয় প্রাণী মৃত্তিকা গঠন সম্পূর্ণ করে। মৃত্তিকায় উপস্থিত বিভিন্ন প্রকার নীলাভ সবুজ শৈবাল জৈব-রাসায়নিক চক্রের মাধ্যমে সম্পূর্ণ করে বিভিন্ন মৌলের আবর্তনে সাহায্য করে।

সামাজিক গুরুত্ব- অর্থনীতিবিদগণ জীববৈচিত্র্যকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের উন্নতির হাতিয়ার হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। যে দেশের জীব-বৈচিত্র্য যত বেশি ভবিষ্যতে তাদের উন্নতির সম্ভাবনা ও ততবেশি। অর্থনৈতিক উন্নতির সাথে সাথে তাদের জীবনযাত্রার মানের ও উন্নতি ঘটবে ।যেহেতু বর্তমান আর্থ-সামাজিক পরিবেশে অর্থ ও সুস্বাস্থ্যের ওপর মানুষের মর্যাদা নির্ভর করে তাই জীববৈচিত্র্যের ওপর সামাজিক গুরুত্ব প্রত্যক্ষভাবে নির্ভরশীল।

নৈতিক গুরুত্ব- জীববৈচিত্র্য যেহেতু বিভিন্ন প্রজাতির ধারক ও বাহক, মানুষ তাই জীববৈচিত্র্যের গুরুত্ব অনুধাবন করে পৃথিবীর প্রত্যেক জীবকে বাঁচিয়ে রাখার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছে। প্রয়োজনে নির্দিষ্ট প্রজাতিগুলিকে সংরক্ষণের মাধ্যমে টিকিয়ে রাখতে পারলে মানবসভ্যতা দীর্ঘস্থায়ী হবে।

নান্দনিক গুরুত্ব- প্রাকৃতিক ও নৈসর্গিক দৃশ্যাবলি প্রতিটি মানুষকে আকৃষ্ট করে। তাই মানুষ ছুটে চলে নদীর পাড়ে, সমুদ্রসৈকতে, নির্জন দ্বীপ অঞ্চলে অথবা পার্বত্য অঞ্চলে যেখানে রয়েছে সমৃদ্ধ জীব-বৈচিত্র্য। বর্তমানে যেসব অভয়ারণ্য, জাতীয় উদ্যান, বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ গড়ে তোলা হয়েছে সেইসব স্থানে অসংখ্য মানুষ নির্মল আনন্দ উপভোগের জন্য পাড়ি দেয়। প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের বিশেষ আকর্ষণের কথা মাথায় রেখে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে ইকোট্যুরিজম বা পরিবেশ বান্ধব পর্যটন গড়ে তোলা হচ্ছে।

সম্ভাবনামূলক গুরুত্ব- পৃথিবীর কোন একটি প্রজাতি হয়তো মানবজীবনকে উন্নতির চরম শিখরে নিয়ে যেতে পারে। ওই নির্দিষ্ট প্রজাতিটি চিরতরে পৃথিবী থেকে বিদায় নিলে তা হয়তো সম্ভব হবেনা। পেনিসিলিনের ব্যবহারের পূর্বেই যদি ওই ছত্রাকটি চিরতরে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে যেত, অথবা কুইনাইন আবিষ্কারের পূর্বেই সিঙ্কোনা গাছটি পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হত তাহলে চিকিৎসাশাস্ত্র কীভাবে বিপর্যস্ত হত তা সহজেই অনুমান করা যায়। তাই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা মাথায় রেখে পৃথিবীর প্রতিটি জীবকে সংরক্ষণ করা আশু প্রয়োজন।

 

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post

Random Products