বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য (Ecosystem Diversity) | বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্যের বৈশিষ্ট্য | বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্যের শ্রেণিবিভাগ |

বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য (Ecosystem Diversity)

বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য (Ecosystem Diversity)- কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলে নানান বাস্তুতন্ত্রের সমস্ত সজীব ও অজীব উপাদানের মধ্যে যে বিপুল ভিন্নতা রয়েছে তাহা জীব বৈশিষ্ট্যগত বৈচিত্র্য। প্রত্যেকটি বাস্তুতন্ত্রেই রয়েছে নিজস্ব জীবগোষ্ঠী। এই জীবগোষ্ঠী গড়ে ওঠে বাস্তুতন্ত্রের মধ্যস্থিত উদ্ভিদ, প্রাণী এবং আণুবীক্ষণিক জীবের সমন্বয়ে। প্রত্যেকটি বাস্তুতন্ত্রের জীবগোষ্ঠী অন্য বাস্তুতন্ত্রের জীবগোষ্ঠী থেকে স্বতন্ত্র হয়। অরণ্য, তৃণভূমি, মরু ও মরুপ্রায় অঞ্চল, জলভাগ ইত্যাদি বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ধরনের বাস্তুতন্ত্র গড়ে ওঠে, যার মধ্যে প্রজাতির বৈচিত্র্য যথেষ্ট মাত্রায় দেখা যায়।

বায়োম ➞ জীবভৌগলিক অঞ্চল  ভূদৃশ্যাবলি  বাস্তুতন্ত্র  বাসস্থান  নিচ  জীবসংখ্যা

বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য (Ecosystem Diversity)
বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য (Ecosystem Diversity)


·        বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্যের বৈশিষ্ট্য –

• জীব ও পরিবেশের আন্তঃক্রিয়ায় বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য রচিত হয়।

 এই বৈচিত্র্যের মান বাড়লে প্রজাতির প্রাচুর্য বাড়ে।

 বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য স্বাভাবিকভাবে জীবগত বৈচিত্র্য সূচিত করে।    

• বিভিন্ন বাস্তুতন্ত্রের বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য বিভিন্ন হয়।


বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্যের শ্রেণিবিভাগ

বিজ্ঞানী Whittaker 1972 খ্রিস্টাব্দে বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্যকে তিনটি ভাগে ভাগ করেন-

1.               a. আলফা বৈচিত্র্য (α Diversity)

b.    বিটা বৈচিত্র্য ( β Diversity)

c.    গামা বৈচিত্র্য (Ɣ Diversity)

a. আলফা বৈচিত্র্য (α Diversity)- কোন নির্দিষ্ট বাস্তুতন্ত্রে বিভিন্ন জীবগোষ্ঠীর মধ্যে বৈচিত্র্যতাকে আলফা বৈচিত্র্য বলে। অর্থাৎ কোন একটি ক্ষুদ্র অঞ্চলে বসবাসকারী বিভিন্ন জীবের বৈচিত্র্যতা হলো আলফা বৈচিত্র্য। যেমন- সুন্দরবনে একটি দ্বীপের জীববৈচিত্র্য।

·        আলফা বৈচিত্র্যের বৈশিষ্ট্য-

 আলফা বৈচিত্র্যের মান বাড়লে, প্রজাতির প্রাচুর্য বাড়ে।

            • এর মাধ্যমে কোন অঞ্চলের প্রজাতির প্রাচুর্য জানা যায়।

 একই গোষ্ঠীর অভ্যন্তরীণ বৈচিত্র্যকেও আলফা বৈচিত্র্য বলে।

• একই জীবগোষ্ঠীভুক্ত জীবের মধ্যেকার বৈচিত্র্য নির্দেশ করে।

• একটি নির্দিষ্ট ক্ষুদ্র বাসস্থানে উপস্থিত প্রজাতি বৈচিত্র্য হল আলফা বৈচিত্র্য।          

• জীব বৈচিত্র্যের সর্বাপেক্ষা ক্ষুদ্রতম একক এটি।

 এরা একই পরিবেশে থেকে একই সম্পদের উপর নির্ভরশীল জীব গোষ্ঠী।

 

b. বিটা বৈচিত্র্য (β Diversity)- একটি ভৌগোলিক অঞ্চল সংলগ্ন ভিন্ন ভিন্ন বাসস্থানের জীবগোষ্ঠীর যে বৈশিষ্ট্য তাহাই  বিটা বৈচিত্র্য। অর্থাৎ একই ভৌগোলিক সীমার মধ্যে থাকা দুটি বাসস্থানে উপস্থিত প্রজাতি বৈশিষ্ট্য হলো বিটা বৈচিত্র্য। যেমন- সুন্দরবনে দুটি পাশাপাশি দ্বীপের জীবগোষ্ঠীর বৈচিত্র্য।

·        বিটা বৈচিত্র্যের বৈশিষ্ট্য-   

 অধিক বিটা বৈচিত্র্যের অর্থ বিভিন্ন বাসস্থানে থাকা প্রজাতির মধ্যে বৈসাদৃশ্য।

 ইহা হলো ভিন্ন বাসস্থানগত পরিবেশে ভিন্ন ভিন্ন সম্পদের উপর নির্ভরশীল জীবগোষ্ঠী।

• আন্তগোষ্ঠী বা আন্তবাসভূমি জীববৈচিত্র্যকে বিটা বৈচিত্র্য বলে।

• বাসস্থানগত বৈচিত্র্যের জন্য জীবের বৈচিত্র্যকে বিটা বৈচিত্র্য বলে।

• বিভিন্ন বাসস্থানে উপস্থিত বিভিন্ন জীবগোষ্ঠীর মধ্যে সাদৃশ্যসূচক হিসাব দ্বারা পরিমাপ           করা হয়।

• বেশি বিটা বৈচিত্র্যের অর্থ বিভিন্ন বাসস্থানে উপস্থিত প্রজাতির মিল কম হওয়া।

 

c. গামা বৈচিত্র্য (Ɣ Diversity)- একটি ভৌগলিক অঞ্চলে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের জীবপ্রজাতির সামগ্রিক বৈচিত্র্যতাকে গামা বৈচিত্র্য বলে। অর্থাৎ একটি বৃহৎ ভৌগোলিক সীমার মধ্যে থাকা বহু অঞ্চলে উপস্থিত বিভিন্ন প্রজাতির প্রাচুর্যকে গামা বৈচিত্র্য বলে। যেমন- সুন্দরবনের সমগ্র দ্বীপের বৈচিত্র্য।

·        গামা বৈচিত্র্যের বৈশিষ্ট্য–

• এর সাহায্যে বিভিন্ন অঞ্চলের সব প্রজাতির জীবের সম্পর্ক জানা যায়।

 এই বৈশিষ্ট্য বেশি হলে পৃথকীকরণ বাড়ে অন্যথায় কমে।

 ভৌগোলিক অঞ্চলের মধ্যে প্রজাতি সংখ্যা বা ঘনত্ব বৃদ্ধি পেলে গামা বৈচিত্র্যের মাত্রা ও বাড়ে।

• বৃহদাকার ভৌগলিক অঞ্চলে উপস্থিত প্রজাতি বৈচিত্র্য হল গামা বৈচিত্র্য।         

• একটি বৃহৎ অঞ্চলে আলফা ও বিটা বৈচিত্র্যের সমন্বয়ের রূপ হল গামা বৈচিত্র্য।

 বিভিন্ন অঞ্চলে উপস্থিত বিভিন্ন জীবের আপাত সম্ভাবনা বা হার নির্ণয় করা হয়।

 বেশি গামা বৈচিত্র্যের অর্থ প্রজাতির পৃথকীকরণ ও ভৌগোলিক অংশীদারিত্ব না থাকা।


Post a Comment (0)
Previous Post Next Post

Random Products