জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণের পদ্ধতি | জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এর তাৎপর্য | Evs Pedia |

জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণ

  • জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণ এর পদ্ধতি- যে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে জীবকূলকে সুষ্ঠুভাবে রক্ষণাবেক্ষণ এবং পরিমিত ব্যবহার দ্বারা বর্তমান প্রজন্মের চাহিদা মিটিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ করা হয় কাকে জীব বৈচিত্র সংরক্ষণ বলে।

জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের পদ্ধতি (Biodiversity Conservation Approach)


 

জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এর তাৎপর্য:-

জীব বৈচিত্র্যের উপাদানসমূহ যেমন বাস্তুতান্ত্রিক ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তেমনি মানুষের প্রয়োজনীয় সকল প্রকার জৈব উপাদান সরবরাহ করে মানুষের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখে।নিম্নলিখিত পরিবেশগত উপাদানগুলির অস্তিত্ব বা স্থায়িত্ব বজায় রাখার জন্য জীববৈচিত্র্য তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এর তাৎপর্য


i. ভৌমজল ভান্ডারের স্থিতিশীলতা ও জলচক্রের ক্রিয়াশীলতা- বনভূমি জলচক্রের ক্রিয়াশীলতা এবং ভৌমজলের স্থিতিশীলতা বজায় রাখে, বন্যা ও খরার হাত থেকে পরিবেশকে রক্ষা করে এবং মৃত্তিকায় জলের পরিমাণকে নিয়ন্ত্রণ করে। তাই পৃথিবীর জল সংরক্ষণে জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণ বিশেষ প্রয়োজন। জীববৈচিত্র্য হ্রাস পেলে ভৌম জলস্তর অধোগামী হয়। উদ্ভিদ ও প্রাণীকূল  উপস্থিতি যেমন ভৌমজল স্তর পূরণে সাহায্য করে, তেমনি উদ্ভিদকূল প্রস্বেদন প্রক্রিয়ায় মৃত্তিকাস্থিত  জল বায়ুমন্ডলে স্থানান্তরিত করে। ফলে উদ্ভিদ জলচক্র সচল রাখতে সাহায্য করে।

ii. মৃত্তিকার গঠন ও সংরক্ষণ- জীববৈচিত্র্য মৃত্তিকা গঠনে ও সংরক্ষণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হলে মৃত্তিকার গুণগত মানের অবনমন ঘটে এবং মৃত্তিকা ক্ষয় দ্রুত হয়। উদ্ভিদের দেহাবশেষ মৃত্তিকায় জৈব পদার্থ সরবরাহ করে মৃত্তিকা গঠনে সাহায্য করে। অরণ্যের আচ্ছাদন মৃত্তিকাকে ক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করে।

iii. জলবায়ুর স্থিতিশীলতা- অরণ্য অঞ্চলের উদ্ভিদ বাষ্পমোচনের  ফলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণকে নিয়ন্ত্রণ করে। এই অঞ্চলের জলচক্রের স্থিতিশীলতা বজায় রাখে। বর্তমানে নানান রকম অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপের  ফলে বনভূমি হ্রাস পাচ্ছে। ফলে বায়ুমন্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে যা বিশ্ব উষ্ণায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উষ্ণায়নের ফলে বাস্তুতন্ত্রের অবস্থানগত পরিবর্তন ঘটে। জলবায়ুগত পরিবর্তনের ফলে জুরাসিক যুগে ডাইনোসর জাতীয় প্রাণীদের অবলুপ্তি ঘটে।

iv. দূষক পদার্থের বিয়োজন ও শোষণ- উদ্ভিদকূল বায়ুমন্ডলে ভাসমান ধূলিকণা শোষণ করে বায়ুমন্ডলেকে নির্মল রাখে। বজ্য পদার্থ, আবর্জনা, তৈল জাতীয় পদার্থ প্রভৃতি বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য নষ্ট করে। বাস্তুতন্ত্রে  উপস্থিত আণুবীক্ষণিক  জীবগুলি দূষক পদার্থের বিয়োজন ঘটিয়ে আত্মসাৎ করে। এই বিষয়ে জলাভূমির ভূমিকা অপরিসীম। জলাভূমি দূষক পদার্থের বিভাজন ও শোষণ করে বজ্য জল পরিশ্রুত করে। জৈব অক্সিজেনের  চাহিদা হ্রাস করে এবং ক্ষতিকারক আণুবীক্ষণিক জীবগুলিকে ধ্বংস করে।

v. পুষ্টি মৌলের সঞ্চয় ও চক্রাকার আবর্তন- জীব-বৈচিত্র্য পুষ্টিমৌলের সঞ্চয় ও চক্রাকার আবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জীববৈচিত্র্যের অনুপস্থিতিতে পুষ্টিমৌলের চক্রাকার আবর্তন  ব্যহত হয়। মৃত্তিকায় উপস্থিত আণুবীক্ষণিক জীবগুলি জৈব দেহাবশেষের বিশ্লেষণ ঘটায়। ফলে উদ্ভিদের অণুখাদ্যগুলি মাটিতে ফিরে আসে। একটি বিশেষ ধরনের আণুবীক্ষণিক জীব দ্বারা একটি বিশেষ ধরনের অণু খাদ্য মাটিতে যুক্ত হয়। যেমন- রাইজোবিয়াম মাটিতে নাইট্রোজেন যুক্ত করে। তাই মৃত্তিকায় পুষ্টিমৌলের সঞ্চয় ও চক্রাকার আবর্তনের ক্ষেত্রে আণুবীক্ষণিক জীবসমূহের প্রজাতিগত বৈচিত্র্য বিশেষ প্রয়োজন।

vi. সম্পদ সংরক্ষণ- পৃথিবীর সমস্ত প্রাণীকূল খাদ্যের জন্য উদ্ভিদের ওপর নির্ভরশীল। তাই, উদ্ভিদজগতের বৈচিত্র্যরক্ষার মাধ্যমেই পৃথিবীর মোট খাদ্যের চাহিদা মেটানো সম্ভব। মানুষের মোট খাদ্যের চাহিদার 40 শতাংশ আসে মাত্র 20টি  প্রজাতির উদ্ভিদ থেকে। এছাড়াও কয়েকটি প্রাণী খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় 70,000 জীব প্রজাতি মানুষের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

আয়ুর্বেদীয় চিকিৎসায় উদ্ভিদের ভেষজগুণকে কাজে লাগানো হয়। ভেষজ উপাদানকে পাথেয় করে বহু এলোপ্যাথিক ঔষধ প্রস্তুত করা হয়। যথা- সিঙ্কোনা গাছ থেকে কুইনাইন, দ্রাক্ষালতা থেকে লিউকেমিয়া রোগের ঔষধ প্রস্তুত করা হয়। পৃথিবীতে ব্যবহৃত ঔষধের  প্রায় 40 শতাংশ আসে উদ্ভিদ ও প্রাণীজগৎ থেকে। ভবিষ্যতে আরও গবেষণার ফলে বহু প্রকার ঔষধের সন্ধান পাওয়া যাবে বৈচিত্র্যময় জীবজগৎ থেকে। তাই জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণ আশু প্রয়োজন।


Post a Comment (0)
Previous Post Next Post

Random Products