জীববৈচিত্র্যের উষ্ণকেন্দ্র বা বায়োডাইভারসিটি হটস্পট (Biodiversity Hotspot) |

জীববৈচিত্র্যের উষ্ণকেন্দ্র বা বায়োডাইভারসিটি হটস্পট

জীববৈচিত্র্যের উষ্ণকেন্দ্র বা বায়োডাইভারসিটি হটস্পট (Biodiversity Hotspot)- 1988 খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ বিজ্ঞানী নর্ম্যান মায়ারস (Norman Myers) তাঁর "The Environment" নামক পত্রিকায় প্রথম জীববৈচিত্রের হটস্পট ধারণার উল্লেখ করেন। তাঁর মতে- "Hotspot is earth's biologically richest and most endangered terrestrial ecoregious".

সংরক্ষণ বিদদের সংজ্ঞানুযায়ী- যে সকল প্রাকৃতিক আবাসস্থলে সর্বাধিক সংখ্যক প্রজাতি অবলুপ্তির পথে এবং সংকটাপন্ন সেইসব প্রাকৃতিক বাসস্থানকে সংরক্ষণের বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, তাদের “হটস্পট” (Hotspot) বলে।



  • “হটস্পট” (Hotspot) নির্ধারণের ভিত্তি-

নর্ম্যান মায়ারস (Norman Myers) হটস্পটগুলির নির্ধারণের ভিত্তি ঠিক করে। কোনো স্থান “হটস্পট” (Hotspot) হিসাবে নির্ধারণ হতে হলে-

i.             স্থানটিতে 0.5% বা 1500 টি আঞ্চলিকভাবে সীমাবদ্ধ প্রজাতি থাকতে হবে।

ii.            স্থানটির মধ্যে প্রায় 70% প্রজাতি আদিম জীব হলে স্থানটি “হটস্পট” (Hotspot) আখ্যা দেওয়া যেতে পারে।


বায়োডাইভারসিটি হটস্পটের বৈশিষ্ট্য –

 জীববৈচিত্র্যের প্রাচুর্য এখানে সর্বাধিক।

• এই সকল অঞ্চলে অধিক সংখ্যায় দুষ্প্রাপ্য উদ্ভিদ ও প্রাণী বাস করে। কিন্তু তাদের অস্তিত্ব বর্তমানে বিপন্ন হতে চলেছে।

 পৃথিবীর এমন কিছু বনাঞ্চল আছে যার বিভিন্ন জীবপ্রজাতি মানুষের হস্তক্ষেপের বাইরে রয়েছে ও উহারা নিজ অস্তিত্ব বজায় রাখছে।


  •  জীববৈচিত্র্যের উষ্ণকেন্দ্র বা বায়োডাইভারসিটি হটস্পটের সংখ্যা-

নর্ম্যান মায়ারস (Norman Myers) প্রথমে সারা বিশ্বে 10 টি “হটস্পট” (Hotspot) এর কথা বলেন (1988)। পর তিনি আরো 8 টি “হটস্পট” (Hotspot)  যোগ করেন এবং বিশ্বে হটস্পটের সংখ্যা বেড়ে 18 হয় (1990)। পরবর্তীকালে “হটস্পট” (Hotspot) নির্ধারণের ভিত্তির উপর নির্ভর করে প্রথমে 7 টি (1999) এবং পরে 9 টি “হটস্পট” (Hotspot) যুক্ত করার ফলে বিশ্বে মোট হটস্পটের সংখ্যা 34 পর্যন্ত বিস্তৃত হয় (2004)। বর্তমান পৃথিবীতে মোট “হটস্পট” (Hotspot) এর সংখ্যা 36 টি। যা পৃথিবীর মূল ভূভাগের মাত্র 1.4% এলাকা দখল করে থাকলেও এখানেই উদ্ভিদ প্রজাতির 44% এবং পাখি, স্তন্যপায়ী, সরীসৃপ ও উভচর মিলিয়ে প্রায় 35% প্রজাতির বাস।

 বর্তমানে পৃথিবীর 36 টি “হটস্পট” (Hotspot) আছে। যেগুলি 5 টি জীব ভৌগোলিক অঞ্চলে (Biogeographical regions) বিভক্ত। এগুলি হলো–


A.     v  আফ্রিকা- এখানে 8 টি জীববৈচিত্র্যের হটস্পট আছে।

1.    মাদাগাস্কার

2.    সাকুলেন্ট কারু

3.    কেপ প্রদেশ

4.    পশ্চিম আফ্রিকার জঙ্গল

5.    পূর্ব আফ্রিকার উপকুলবর্তী অরন্যাঞ্চল

6.    আফ্রিকার হর্ণ অঞ্চল

7.    ইস্টার্ন আফ্রোমন্টেন

8.    ম্যাপুটাল্যান্ড-পোন্ডল্যান্ড-আলবানি

B.   v    এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল- এখানে 14 টি জীববৈচিত্র্যের হটস্পট আছে।

9.    সুন্ডাল্যান্ড

10. ওয়ালাসিয়া

11. ইন্দো-বার্মা

12. ফিলিপিনস

13. দক্ষিণ-মধ্য চিন

14. পশ্চিমঘাট পর্বতমালা ও শ্রীলঙ্কা

15. দক্ষিণ-পশ্চিম অস্ট্রেলিয়া

16. নিউ ক্যালিডোনিয়া

17. নিউজিল্যান্ড

18. পলিনেশিয়া-মাইক্রোনেশিয়া

19. হিমালয়

20. জাপান

21. ইস্ট মেলানেশিয়া আইল্যান্ড

22. পূর্ব অস্ট্রেলিয়ার বনাঞ্চল

C.  v   ইউরোপ ও মধ্য এশিয়া- এখানে 4 টি জীববৈচিত্র্যের হটস্পট আছে।

23. ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল

24. ককেশাস

25. মধ্য এশিয়ার পার্বত্য অঞ্চল

26. দ্য ইরানো-আনাতোলিয়ান

D.  v  উত্তর ও মধ্য আমেরিকা- এখানে 5 টি জীববৈচিত্র্যের হটস্পট আছে।

27. ক্যালিফোর্নিয়া

28. ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ

29. মেসো আমেরিকা

30. উত্তর আমেরিকার উপকূলীয় সমভূমি

31. ম্যাড্রিয়ান পাইন ওক উডল্যান্ডস

E.   v  দক্ষিন আমেরিকা- এখানে 5 টি জীববৈচিত্র্যের হটস্পট আছে।

32. ব্রাজিলের আটলান্টিক জঙ্গল

33. ক্রান্তীয় আন্দিজ

34. ব্রাজিলীয় সেরাডো (সবচেয়ে সমৃদ্ধতম)

35. মধ্য চিলি

36. তুমবেস-চোকো-ম্যাগডেলেনা

 ভারতে জীববৈচিত্র্যের হটস্পট 4 টি-

(i)           পূর্ব হিমালয়- উত্তর-পূর্ব নেপাল, ভূটান, দক্ষিণ-পশ্চিম চিন ও হিমালয়ের পূর্ব অংশ।

(ii)      পশ্চিমঘাট ও শ্রীলঙ্কা

(iii)       ইন্দোবার্মা- পূর্ব বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়া, ব্রহ্মপুত্র নদের দক্ষিণে উত্তর- পূর্ব ভারত পর্যন্ত।

(iv)        সুন্ডাল্যান্ড- ভারতের আন্দামান ও নিকোবর অঞ্চল নিয়ে গঠিত।


Post a Comment (0)
Previous Post Next Post

Random Products