জলনির্গম প্রণালী (Drainage Pattern) কাকে বলে? শ্রেণীবিভাগ, উৎপত্তি, বৈশিষ্ট্য , উদাহরণসহ সমস্ত কিছু এখানে আলোচনা করা হল-
- জলনির্গম প্রণালী (Drainage Pattern) কাকে বলে?
কোনো নদী অববাহিকায় একটি নদী গোষ্ঠীর অন্তর্গত প্রধান নদী, উপনদী, শাখানদী, প্রশাখা নদী সম্মিলিতভাবে যে বিশেষ নকশা বা জ্যামিতিক রূপরেখা বা ভঙ্গির সৃষ্টি করে তাকে জলনির্গম প্রণালী বলে।
এর ইংরেজি প্রতিশব্দ "Drainage Pattern" যার অর্থ "The physical form and pattern of the drainage system".
কোনো কোনো ক্ষেত্রে নদী অববাহিকার নদীগুলি পরস্পরের মধ্যে ব্যবধান সৃষ্টি করে যে বিশেষ বাঁক বা নকশা তৈরি করে তাকে জলনির্গম বিন্যাস বলে (Drainage Arrangement)।
William D. Thornbwry এর মতে - "Cirten so called drainage patterns mide batter be termed drainage arrangement since they refer more to the spadian relationships of individual system than to the over all pattern by the individual drainage lines".
![]() |
জলনির্গম প্রণালী (Drainage Pattern) |
- জল নির্গম প্রণালীর শ্রেণীবিভাগ করো:
A. বৃক্ষরুপী জলনির্গম প্রণালী:(Dendritic Drainage pattern)
সৃষ্টি - ইংরেজি "Dendritic" কথাটির উৎপত্তি গ্রিক শব্দ "Dendron" থেকে। যার অর্থ "বৃক্ষ"।
সংজ্ঞা -আদ্র জলবায়ু অঞ্চলে সমান্তরাল শিলাস্তর ও সমপ্রকৃতির শিলাগঠিত ভূভাগে গাছের ডালপালার ন্যায় যে নদীবিন্যাস গড়ে ওঠে তাহা বৃক্ষরুপী জলনির্গম প্রণালী
বৈশিষ্ট্য -• ক্রমবিকাশ বা উৎপত্তি-
1931 খ্রীষ্টাব্দে বিজ্ঞানী W.S.Glock ও Parker একটি মডেল তুলে ধরেন। যাতে নিম্নলিখিত 6 টি পর্যায় বিদ্যমান।
" গ্লক মডেল " :
1.প্রাথমিক বিস্তার - ভূমির প্রাথমিক ঢাল অনুসারে একটি প্রধান নদী অনুগামী ও কয়েকটি উপনদী রিল ও গালির মাধ্যমে নদীখাত সৃষ্টি শুরু করে।
2.দীর্ঘায়ন - প্রধান নদী ও উপনদীগুলি মস্তক ক্ষয় বা উৎসমুখি ক্ষয় দ্বারা দৈর্ঘ্য বিস্তার করবে।
3.বিস্তার - এখানে প্রধান উপনদীগুলির মধ্যবর্তী এলাকায় ছোটো ছোটো অনেক উপনদীর সৃষ্টি হয়। নদী জালিকা প্রায় জলবিভাজিকা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়।
4.সর্বাধিক বিস্তার - উপনদী গুলির বিস্তার ও দৈর্ঘ্য সর্বাধিক হয়। অববাহিকায় নদীর ঘনত্ব হয় সর্বাধিক।
5.সমন্বয় সাধন - উপনদীর সংখ্যা হ্রাস পেয়ে অববাহিকার নদী হ্রাস পায়। উপনদীগুলি নিম্ন প্রবাহের দিকে উপত্যকার বিস্তার ঘটায়। প্রধান নদী ও উপনদীগুলির প্লাবনভূমি বিস্তৃত হয়। প্লাবনভূমিতে প্রধান নদীগুলির বাঁক সৃষ্টি করে। দীর্ঘ সময় পর ভূমিরূপ ক্ষয় ও সমতলীকরণ দ্বারা উচ্চতা হ্রাস পায় এবং নদী জালিকাগুলি নিজেদের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করে ডালপালার রূপ নেয়।
বৃক্ষরূপী জলনির্গম প্রণালীর শ্রেণীবিভাগ :
1. উপবৃক্ষরূপী নদী নকশা - মূল নদীর কেবলমাত্র একপাশে উপনদীগুলি জালকের ন্যায় শাখা-প্রশাখার মতো গড়ে উঠলে তাকে উপবৃক্ষরূপী জলনির্গম প্রণালী বলে।
• বৈশিষ্ট্য - a. বৃক্ষরূপী নদীনকশার এটি একটি পরিবর্তিত রূপ।
b.স্বল্প নতিযুক্ত যুক্ত (10-20ডিগ্রী), সূক্ষ্ম গ্রথন যুক্ত একনতি শিলাস্তরে গড়ে ওঠে।
c. মাঝারিঢালের ভূভাগে ও সৃষ্টি হতে পারে।
d. এক্ষেত্রে প্রধান নদীর একপাশে অপেক্ষাকৃত নরম শিলা থাকায় সেদিকের শিলাস্তরে বৃক্ষরূপী নকশা গঠিত হয়।
উদাহরণ - ছোটনাগপুর মালভূমি
2. পিনেট বা চুনট নদী নকশা : ইংরেজি "পিনেট" শব্দের অর্থ "পাখির পালক"। মূল নদীর দুপাশ থেকে খুব ছোটো ছোটো দৈর্ঘ্যের অসংখ্য উপনদী খুব ঘনভাবে সূক্ষ্মকোণে মিলিত হয়ে পাখির পালকের রেখায় ন্যায় এই নদী নকশা গড়ে তোলে।
• বৈশিষ্ট্য - a. বৃক্ষরূপী নদী নকশার এটি একটি পরিবর্তিত রূপ।
b. মূল নদীর অ়ক্ষের দুপাশে উপনদীগুলি অতি ঘনভাবে, সুসামঞ্জস্য রূপে মিলিত হয়।
c. পিনেট নদী নকশার উদ্ভবে ভূ-গঠনের প্রভাব প্রায় নেই। তবে-
d. এই নদী নকশা গঠনে ভূমির ঢাল সর্বাধিক প্রভাব ফেলে।
e. বিজ্ঞানী Thornbwry এর মতে- অতি খাড়া ঢালের উপর দিয়ে মূল নদীর দু'পাশের উপনদী গুলি মিলিত হয়।
f. উপনদীগুলি মূল নদীতে সূক্ষ্ম কোণে মিলিত হলেও উহারা প্রায় সমান্তরাল অবস্থান করে।
উদাহরণ - নর্মদা নদীর অববাহিকা
B. জাফরিরূপী জলনির্গমপ্রণালী (Trellis Drainage Pattern):
সংজ্ঞা - আদ্র জলবায়ু অঞ্চলে একনত ও ভাঁজ গঠিত ভূভাগে শিলাস্তরের নতি ও আয়াম অনুসরণ করে উপনদীগুলি অনুগামী নদী বা মূল নদীর সাথে সমকোণে মিলিত হয়ে যে নদী নকশা গঠন করে তাহাই ট্রেলিস জলনির্গম প্রণালী। ইংরেজি ট্রেলিস (Trellis) কথার অর্থ জাফরি বা কোনো লতাগাছ বিস্তারের জন্য নির্মিত মাচা।
বৈশিষ্ট্য - 1. অনুগামী নদীর সাথে পরবর্তী নদী, পরবর্তী নদীতে বিপরা বা পুনঃভরা নদী সমকোণে মিলিত হয়।
2.গৌণ অনুগামী নদী, গৌণ পরবর্তী নদীরাও পরস্পর সমকোণে মিলিত হয়।
3.ঘন চ্যুতি রেখা ও অতি ফাটল যুক্ত অঞ্চলে দেখা যায়।
4.প্রধান নদী ও উপনদী সুদীর্ঘ পথ অতিক্রম করে এবং উপনদীগুলির প্রবাহপথ পরস্পরের সমান্তরাল থাকে।
5.সমনত ঢালু গঠন, ভাঁজ গঠিত পাললিক অঞ্চল বা স্বল্প রূপান্তরিত শিলায় এটি দেখা যায়।
6.জাফরিরুপী নদী নকশায় নতির বিপরীত দিকে কিছু নদী প্রবাহিত হয় এদের বিনতি বা বিপরা নদী বলে।
7. উপজাফরি জলনির্গম প্রণালীতে উপনদীর ঘনত্ব কমে থাকে।
উদাহরণ - আরাবল্লী পর্বতের পশ্চিমঢাল।
![]() |
জাফরিরূপী জলনির্গমপ্রণালী |
C. আয়তাকার জলনির্গম প্রণালী (Rectangular Drainage pattern):
প্রধান নদী ও তার উপনদীগুলি সমকোণে বাঁক নিয়ে প্রবাহিত হয়ে যেন নকশা গঠন করে তাহাই আয়তাকার জলনির্গম প্রণালী।
বৈশিষ্ট্য - 1.প্রধান নদীর সাথে উপনদীগুলি সমকোণে মিলিত হয়।
2.নদীগুলি সরলরৈখিক কিন্তু উপনদীগুলি অনেক সময় সমকোণ ছাড়াও সূক্ষ্মকোণে বাঁক নিয়ে প্রধান নদীতে মেশে।
3. স্বল্প মধ্যম বৃষ্টিপাত যুক্ত অঞ্চলে এটি গড়ে ওঠে বলে প্রধান নদী,উপনদীর দৈর্ঘ্য কম।
4.নদী অববাহিকাতে নদীর ঘনত্ব ও কম থাকে।
5.দারন বা ফাটলগুলি ভূপৃষ্ঠে দুর্বল এলাকা বলে ক্ষয়ের মাধ্যমে এখানে দ্রুত নদী উপত্যকা সৃষ্টি হয়।
6. আয়তাকার নদী নকশার এক বিশেষ রূপ হলো অসমকৌণিক নদী নকশা। যেখানে চ্যুতিসমূহ সমকোণে ছেদ না করে সূক্ষ্ম বা স্থূলকোণে ছেদ করে।
7. এই জলনির্গম প্রণালীতে কোনো নতি অনুগামী নদী নেই।
8.এখানে সবচেয়ে দীর্ঘ নদীটি হলো মূল নদী ও বাকিরা হলো উপনদী।
উদাহরণ - মধ্যভারতের বেতোয়া ও শোন নদীর অববাহিকায়।
D. কেন্দ্রবিমুখ জলনির্গমপ্রণালী (Radial Drainage pattern) :
কোনো উঁচু স্থানের একটি কেন্দ্রীয় চূড়া থেকে বাইরের দিকে খাড়া ঢালে সাইকেলের স্পোকের মতো ছোটো ছোটো নদী অরীয়ভাবে তীব্র গতিতে প্রবাহিত হয়ে যে নদী বিন্যাস সৃষ্টি করে তাহাই কেন্দ্রবিমুখ জলনির্গম প্রণালী।
বৈশিষ্ট্য- 1.এই নদী বিন্যাসে একটি ঊর্ধ্বভঙ্গ বা অবশিষ্ট পর্বত, আগ্নেয় শঙ্কুর উচ্চ অংশ থেকে নদীগুলি বাইরের দিকে বিস্তৃত হয়।
2.ভূমিভাগের খাড়া ঢালের জন্য নদীর গতি থাকে তীব্র। তাই-
3. নদীর ক্ষয়শক্তি অনেক বেশি থাকে।
4. এই নদী নকশাতে নদীর দৈর্ঘ্য খুব কম হয়।
5.এক্ষেত্রে নদীর প্রবাহপথ হয় খুব আঁকাবাঁকা।
6.নদীগুলি যতই প্রসারিত হতে থাকে ততই এরা কেন্দ্র থেকে দূরে সরতে থাকে।
7. এটি ডোমাল (Domal) স্ট্রাকচার গঠিত অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য বহন করে।
8. এই জলনির্গম প্রণালী ব্যবচ্ছিন্ন ভূমিরূপকে ও নির্দেশ করে।
উদাহরণ - ছোটনাগপুর মালভূমির পরেশনাথ পাহাড়ের জলনির্গম প্রণালী,হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের কোকো ক্রেটার (Koko crater) প্রভৃতি।
![]() |
কেন্দ্রবিমুখ জলনির্গমপ্রণালী |
E. কেন্দ্রমুখী জলনির্গম প্রণালী( Centripetal Pattern): চারপাশের উচ্চস্থান থেকে কোনো নিম্ন বা অবনমিত অববাহিকা অঞ্চলে বা কেন্দ্রীয় নিম্নভূমির দিকে ছোট ছোট নদী প্রবাহিত হয় যে নদী নকশা গড়ে তোলে তাহাই কেন্দ্রমুখী জলনির্গম প্রণালী।
বৈশিষ্ট্য - 1.এই নদী নকশাতে নদীগুলির উৎসস্থান বৃত্তাকারে বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠে।
2.এক্ষেত্রে নদীগুলি বাইরের চারপাশ থেকে কেন্দ্রমুখী হয়।
3.ছোট ছোট নদীগুলি স্বাধীনভাবে নীচের দিকে নামে কিন্তু কোনো উপনদী সৃষ্টি করে না।
4.এটি শিলাস্তরের অধোভঙ্গরূপ বা বেসিন গঠন নির্দেশ করে।
5.এই প্রণালীতে নদীগুলির বেগ ও শক্তি অনেক কম থাকে।
6.এই নদীগুলির প্রধান কাজ মূলত সঞ্চয়।
7.একটি সাধারণত পার্বত্য হ্রদ অঞ্চলে বেশি দেখা যায়।
8. এই জলনির্গম প্রণালীতে বিভিন্ন নদীর কেন্দ্রে একটি জলাশয় বা হ্রদ সৃষ্টি হতে পারে।
উদাহরণ - মনিপুরের লোকটাক হ্রদে পতিত নদী দ্বারা সৃষ্ট, নেপালের কাঠমান্ডু উপত্যকার বাঘমতি নদীর বহু উপনদী দ্বারা সৃষ্ট কেন্দ্রমুখী নদী নকশা দেখা যায়।
![]() |
কেন্দ্রমুখী জলনির্গম প্রণালী |
F. সমান্তরাল জলনির্গম প্রণালী (Parallal Drainage Pattern):
পর্বত বা মালভূমির প্রান্তদেশে মাঝারি থেকে খাড়া ঢালে অসংখ্য ছোটো নদী একই দিকে পরস্পরের সমান্তরালের সোজাসোজি দ্রুত প্রবাহিত হয়ে যে নদী নকশা গড়ে ওঠে তাহাই সমান্তরাল জলনির্গম প্রণালী।
বৈশিষ্ট্য : 1. নদীগুলি খুব ছোটো ছোটো সংখ্যায় অধিক হয়।
2.এক্ষেত্রে নদীগুলি বিপরা ও গৌণ অনুগামী প্রকৃতির হয়।
3.উপনদী রূপে এই নদীগুলি একাধিক প্রধান নদীর সাথে মিলিত হয়।
4.নদীগুলি মূলত উৎস অঞ্চলে থাকে ও অনিত্যবহ হয়।
5.চ্যুতি রেখা নিয়ন্ত্রিত হলে নদীগুলি সরলরেখার ন্যায় হয়।
6. এ ধরনের নদী বিন্যাসে নদী বাঁক বিশেষ থাকে না।
7.এই নদী নকশায় উপনদীর সংখ্যা কম হয়।
8.এই নদী বিন্যাস গড়ে ওঠার জন্য ভূগাঠনিক প্রভাব বিশেষ দায়ী।
9.এই ধরনের নদী নকশা নদী বিবর্তনের প্রারম্ভিক বা প্রাথমিক অবস্থাকে নির্দেশ করে।
উদাহরণ - বিন্ধ্যের ভৃগু ঢাল (Vindhayan escarpment), মেসা ভার্দে ন্যাশনাল পার্ক
ইত্যাদি।
G. অঙ্গুরিয়াকার নদী নকশা (Annular Drainage pattern) : ব্যবচ্ছিন্ন গম্বুজাকার ভূমিরূপের দুর্বল শিলাস্তরকে কেন্দ্র করে গম্বুজটির চারদিকে কেন্দ্রবিমুখ ছোটো ছোটো আংটির আকারে নিচের দিকে প্রবাহিত হয়ে যে নদী নকশা সৃষ্টি করে তাহাই অঙ্গুরিয়াকার নদী নকশা। উল্লেখ্য "Annular"শব্দটি ল্যাটিন শব্দ "Anulus"থেকে আগত, যার অর্থ "Ring"।
বৈশিষ্ট্য- 1. ছোটো ছোটো কেন্দ্রবিমুখ নদীগুলি খরস্রোতা হয় এবং বড়ো বড়ো নদীর উপনদী রূপে সমকোণে মিলিত হয়।
2.ছোটো ছোটো নদীগুলি হল অনুগামী এবং বড়ো বড়ো নদীগুলি হল পরবর্তী নদী।
3.ছোটো উৎস নদীগুলি ভূমির ঢালকে অনুসরণ করে।
4.বড় উপনদীগুলি শিলাস্তরের নরম ও দুর্বল অংশকে অনুসরণ করে।
5. এই ধরনের জলনির্গম প্রণালী সাধারণত পরিণত ও ব্যবচ্ছিন্ন গম্বুজাকারে পরিণত হয়।
6.এই প্রকার জলনির্গম প্রণালীতে অসংখ্য ধাপ সৃষ্টি হয়।
উদাহরণ - যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ডাকোটায় রেড নদী ব্ল্যাকহিল পাহাড়কে বেষ্টন করে প্রবাহিত হচ্ছে।
ক্ষয়চক্র থেকে সমস্ত MCQ এবং SAQ | Evs Pedia |
- H. বিনুনিরূপী জলনির্গম প্রণালী (Braided Drainage pattern):
কোনো বদ্বীপ অঞ্চলে ও পলল ব্যজনীতে নদীগর্ভে শোল,চর বা দ্বীপ গড়ে উঠলে এর দুপাশ দিয়ে মূল নদীর স্রোত একাধিক শাখায় বিভক্ত হয়ে বেশ কিছুটা এগিয়ে মিলিত হয় এবং আবার পৃথক হয়ে মেয়েদের চুলের বিনুনির মতো যে নদী নকশা গড়ে ওঠে তাহাই বিনুনিরুপী জলনির্গম প্রণালী।
বৈশিষ্ট্য - 1.নদীর বদ্বীপ সমভূমিতে এই প্রকার জলনির্গম প্রণালী গড়ে ওঠে।
2. পর্বত পাদদেশে ও এই প্রকার জলনির্গম প্রণালী দেখা যায়।
3.এই নদী প্রণালীর মাঝে মধ্যে দ্বীপ গড়ে ওঠে।
4.অপেক্ষাকৃত নবীন শিলাগঠিত অঞ্চলে ইহা গড়ে ওঠে।
5.এক্ষেত্রে নদীর বেগ ও ঢাল দুই-ই কম থাকে।
I. বড়শি বা আঁকশিরুপী জলনির্গম প্রণালী (Barbed Drainage pattern):
সংজ্ঞা - কোনো অববাহিকায় যখন উপনদী গুলি প্রধান নদীর গতিপথের উল্টোদিকে প্রবাহিত হয়ে শেষে প্রধান নদীর দিকে মুখ করে অর্থাৎ বড়শি বা আঁকশির মতো বেঁকে তার সঙ্গে মিলিত হয়, তখন তাকে বড়শি বা আঁকশিরূপী জলনির্গম প্রণালী বলে।
বৈশিষ্ট্য - 1. সাধারণত অধিকাংশ অববাহিকায় প্রধান নদী যেদিকে প্রবাহিত হয় উপনদীও সেদিকে কোনাকুনি বা আড়াআড়িভাবে প্রবাহিত হয়ে প্রধান নদীতে গিয়ে পড়ে, কিন্তু বড়শি বা আঁকশিরূপী জলনির্গম প্রণালীতে উপনদী প্রবাহপথের বেশিরভাগটাই প্রধান নদীর গতিপথের বিপরীত দিকে প্রবাহিত হয়ে শেষে প্রধান নদীর দিকে মুখ করে অর্থাৎ বেঁকে মিলিত হয়।
2. উপনদী যেখানে বেঁকে মিলিত হয়,সেই বাঁকের উত্তল মুখ প্রধান নদীর ঊর্ধ্বগতির দিকে মুখ করে থাকে।
3.অধিকাংশ ক্ষেত্রে তির্যকভঙ্গিতে অববাহিকার উত্থানের জন্য অথবা নদী গ্রাসের ফলে এই ধরনের জলনির্গম প্রণালীর সৃষ্টি হয়।
4.বেশিরভাগ স্থানীয়ভাবে এই জলনির্গম প্রণালী গড়ে ওঠে।
5. ভূনিম্নস্থ গঠনের সঙ্গে সম্বন্ধ:
a.যদি কোনো ভূগাঠনিক কারণে তির্যকভঙ্গিতে অববাহিকার ভূমিভাগের উত্থান ঘটে অর্থাৎ অববাহিকা বিপরীত দিকে হেলে যায়, তাহলে ভূমি ঢালের পরিবর্তনের জন্য প্রধান নদী ও ঠিক উল্টোদিকে প্রবাহিত হতে পারে।
b. আর সেরকম হলে প্রধান নদীর গতিপথের দিকে মুখ করে যেসব উপনদী মিলিত হয়েছিল, সেগুলির সঙ্গমের মুখ ও ধীরে ধীরে প্রধান নদীর নতুন গতিপথের দিকে বাঁকতে থাকবে এবং কালক্রমে তা বড়শি বা আঁকশির মতো দেখতে হবে।
উদাহরণ - ঝাড়খন্ডে সুবর্ণরেখার দুই উপনদী খরকাই ও করকরি ঊর্ধ্বগতির দিকে এরকম বড়শি বা আঁকশির মতো বাঁক নিয়ে সুবর্ণরেখা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, তির্যকভঙ্গিতে সুবর্ণরেখা অববাহিকার উত্থানের জন্যই এরকম ঘটেছে।
J. হেরিংবোন- সদৃশ জলনির্গম প্রণালী (Herringbone like Drainage pattern):
সংজ্ঞা - প্রায় সরলরেখায় প্রবাহিত প্রধান নদীর সঙ্গে দু'পাশের উপনদীগুলি ও প্রায় সরলরেখায় প্রবাহিত হয়ে প্রধান নদীতে এসে মিশলে যে নদী নকশা ফুটে ওঠে তার সঙ্গে হেরিং মাছের কাঁটার অনেক সাদৃশ্য থাকায় একে হেরিংবোন জলনির্গম প্রণালী বলে। আবার, মানুষের বুকের পাঁজরের(rib) গঠনের সঙ্গে এর মিল থাকায় একে পাঁজররুপী জলনির্গম প্রণালী ও বলে।
বৈশিষ্ট্য - 1.অববাহিকার মধ্যে প্রধান নদী প্রায় সরলরেখায় প্রবাহিত হয়।
2. দু'পাশের উপনদীগুলির গতিপথ ও প্রায় সরলরেখার মতো হয়।
3.এই জলনির্গম প্রণালীর একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো দু'পাশের উপনদীগুলি মুখোমুখি এসে প্রধান নদীতে মিলিত হয় না।
4.নিম্নস্থিত গঠনের সঙ্গে সম্বন্ধ:
a. প্রধান নদী ও দু'পাশের উপনদীগুলির সরল প্রবাহপথ এবং দুদিকের উপনদীগুলির একই রেখা বরাবর মুখোমুখি প্রবাহিত না হওয়া থেকে বোঝা যায় এই জলনির্গম প্রণালী খুব বেশি পরিমাণে নিম্নস্থিত গঠন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
b.প্রকৃতপক্ষে যখন কোনো অববাহিকায় আয়াম চ্যুতি বরাবর পর্যায়ক্রমিক কঠিন ও কোমল শিলাস্তর দুপাশে সরে যায়, তখন এই জলনির্গম প্রণালী সৃষ্টি হয়। সে ক্ষেত্রে চ্যুতি বরাবর প্রধান নদী উপত্যকার দুপাশে সমান্তরাল শৈলশিরা থাকে,সেখানেও প্রায় সরলরেখায় প্রধান নদী এবং দুপাশের শৈলশিরার শীর্ষদেশে সৃষ্ট ছোটো ছোটো নদী সোজা এসে সমকোণে প্রধান নদীতে মিলিত হয়ে এই ধরনের জলনির্গম প্রণালী গড়ে তুলতে পারে।
উদাহরণ -1. কাশ্মীর উপত্যকায় ঝিলাম নদীর উদ্ধপ্রবাহপথে এই ধরনের জলনির্গম প্রণালী দেখা যায়।
2. এছাড়া হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে কোশির বামদিকে উপনদী তামার কোশি এবং ঘর্ঘরার উপনদী রাপ্তির ঊর্ধ্ব প্রবাহ পথেও এই জলনির্গম প্রণালী আছে।
K. জটিল জলনির্গম প্রণালী (Complex Drainage Pattern):
সংজ্ঞা - যখন কোনো অববাহিকার বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন প্রকার ভূতত্ত্বীয় গঠন থাকে, তখন সেই ভূনিম্নস্থিত গঠন অনুসারে বিভিন্ন অংশে নানা ধরনের জলনির্গম প্রণালী গড়ে ওঠে।এই ভাবে একই অববাহিকায় একসঙ্গে বিভিন্ন প্রকার জলনির্গম প্রণালী সৃষ্টি হলে সামগ্রিক ভাবে তাকে জটিল জলনির্গম প্রণালী নামে অভিহিত করা হয়।
বৈশিষ্ট্য - 1. এই ধরনের জলনির্গম প্রণালীতে অববাহিকার এক জায়গায় বৃক্ষরূপী, এক জায়গায় জাফরিরুপী, অন্য জায়গায় আয়তক্ষেত্ররূপী ইত্যাদি বিভিন্ন প্রকার জলনির্গম প্রণালী গড়ে ওঠে।
2. সাধারণত অববাহিকার মধ্যে ভূ-গঠনের পার্থক্যের জন্য বিভিন্ন উপনদীর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অববাহিকায় এই ধরনের বিভিন্ন নদী নকশার সৃষ্টি হয়।
উদাহরণ - ছোটনাগপুর মালভূমিতে কোয়েল নদীর অববাহিকায় এই ধরনের জটিল জলনির্গম প্রণালী দেখা যায়।
L. বিশৃঙ্খল জলনির্গম প্রণালী (Deranged Drainage Pattern):
সংজ্ঞা - তুষারযুগে যেসব অঞ্চল বরফে ঢাকা পড়ে যায়, সেখানে হিমবাহের কার্যের ফলে আগেকার নদী ব্যবস্থার(river system) বিলোপ ঘটে এবং পরিবর্তে হিমবাহ সৃষ্ট গ্রাবরেখা অনিয়মিতভাবে সঞ্চিত হয়। এরপর যখন হিমযুগ শেষ হয়ে যায়, সেখানে সাধারণত এক অসংহত বা এলোমেলো নদী ব্যবস্থা গড়ে ওঠে, যাকে বিশৃঙ্খল জলনির্গম প্রণালী বলে।
বৈশিষ্ট্য - 1. হিমবাহ গলে যাওয়ার ফলে ওইসব জায়গায় গ্রাবরেখার আশেপাশে কিছু হ্রদ ও জলাভূমি সৃষ্টি হয় যেগুলিতে দু একটি ছোটো নদী ও এসে পড়ে।
2. কোনো কোনো হ্রদের একদিকে একটি ছোটো নদী এসে পড়ে এবং অন্যদিকে হ্রদ থেকে একটি নদী পেরিয়ে যায়। আবার
3.কোথাও সুতোর মতো একটি সরু নদী বিভিন্ন জলাভূমির মধ্যে সংযোগ সাধন করে প্রবাহিত হয়।
4. প্রকৃতপক্ষে একটি প্রণালী হিসেবে ওখানকার নদীগুলির প্রবাহপথের নির্দিষ্ট কোনো অভিমুখ তৈরি হয় না।
5. এইভাবে ভূনিম্নস্থিত অনিয়মিত ভূ-গঠনের জন্য এক বিশৃঙ্খল নদী ব্যবস্থা সৃষ্টি হয়।
উদাহরণ - দক্ষিণ ভারতের কিছু কিছু জায়গায় প্রধান প্যালিওজোইক যুগের জলনির্গম প্রণালী পারমোকার্বনিফেরাস হিমযুগে বিনষ্ট হওয়ার পর ওই সব জায়গায় পরবর্তী উষ্ণ যুগে বিশৃঙ্খল জলনির্গম প্রণালী সৃষ্টি হয়েছে।
জীববৈচিত্র্য কাকে বলে? জীববৈচিত্রের বৈশিষ্ট্য | জীববৈচিত্র্য শব্দের প্রথম ব্যবহার |
M. পূর্ববর্তী নদীর জলনির্গম প্রণালী (Drainage Pattern of antecedent river):
সংজ্ঞা - এইভাবে যে নদী তার অববাহিকার নতুন করে উত্থানের ফলে সৃষ্ট ভূগাঠনিক প্রবণতা তথা নির্দেশকে অনুসরণ না করে নিজের উপত্যকাকে গভীরভাবে কেটে আগেকার গতিপথ বজায় রাখতে সমর্থ হয়, তাকে পূর্ববর্তী নদী বলে। আর, পূর্ববর্তী নদী তার উপনদী সহ যে নদী নকশা সৃষ্টি করে তাকে পূর্ববর্তী নদীর জলনির্গম প্রণালী বলে।
বৈশিষ্ট্য - 1. অববাহিকার ভূ-গঠনের প্রবণতা বা নির্দেশ অনুসরণ করে মূল নদী প্রবাহিত হয় না।
2.মূল নদী তার গতিপথের একটি নির্দিষ্ট অংশে পর্বতশ্রেণীকে আড়াআড়িভাবে অতিক্রম করে।
3.মূল নদী যেখানে পর্বতশ্রেণীকে অতিক্রম করে সেখানে গভীর গিরিখাত সৃষ্টি হয়।
4. মূল নদীতে অনেক উপনদী এসে মেশে।
উদাহরণ - ব্রহ্মপুত্র, সিন্ধু,শতদ্রু, তিস্তা প্রভৃতি পূর্ববর্তী নদী।
N. অধ্যারোপিত নদীর জলনির্গম প্রণালী (Drainage Pattern of superimposed river):
সংজ্ঞা - এইভাবে ভিন্ন গঠনযুক্ত উপরিস্থিত শিলাস্তরে সৃষ্ট নদী ব্যবস্থা নীচের শিলা গঠনের ওপর অধ্যারোপিত হলে তাকে অধ্যারোপিত নদীর জলনির্গম প্রণালী বলে।
বৈশিষ্ট্য - 1 . অববাহিকার গঠনের মূল প্রবণতা বা নির্দেশ অনুসরণ করে নদী প্রবাহিত হয় না।
2.নদী উপত্যকায় নতুন যুগের শিলাস্তর অপসারিত হয়ে পুরোনো যুগের শিলাস্তর উন্মুক্ত হয়।
3. নদী উপত্যকার শিলাস্তর ও ভূতাত্ত্বিক গঠনের সঙ্গে নদীর গতিপথের কোনো সামঞ্জস্য থাকে না।
4. সাধারণত সমুদ্রগর্ভ থেকে উত্থিত নতুন পাললিক শিলাস্তর গঠিত ভূমিভাগ, লাভা সঞ্চিত ভূমিভাগ এবং হিমবাহের গ্রাবরেখা সঞ্চিত ভূমিভাগের নীচে চাপা পড়ে থাকা পূর্বেকার যুগের ভিন্ন গঠনযুক্ত শিলাস্তরে এই জলনির্গম প্রণালী গড়ে ওঠে।
উদাহরণ - রাজস্থানের চম্বল ও বানস নদীর জলনির্গম প্রণালী। লাভা মালভূমির ওপর দিয়ে প্রবাহিত এই দুই নদীর অববাহিকায় ক্ষয় কার্যের ফলে লাভা অপসারিত হওয়ায় নীচের ভূ-গঠনের ওপর এই নদী দুটি অধ্যারোপিত হয়েছে।
- নদী গ্রাস বা River Capture বলতে কি বোঝো?
জলবিভাজিকার দুপাশে যদি দুটি অনুগামী নদী প্রবাহিত হয় এবং তাদের মধ্যে একটি নদী অপেক্ষাকৃত বেশি শক্তিশালী ও অপর নদীটি কম শক্তিশালী হয়। তবে-
1. জলবিভাজিকার দু'পাশের নদী দুটি উৎসমুখি বা মস্তকক্ষয় করবে।
2. বিভাজিকার যেদিকে নদীটি বেশি শক্তিশালী তার মস্তক ক্ষয় দ্রুত হবে ও বিপরীত দিকের নদীটি কম হারে মস্তক ক্ষয় চালাবে।
3. একসময় নদী দুটি জলবিভাজিকার অংশকে সম্পূর্ণ ক্ষয় করবে।
4. ফলে শক্তিশালী প্রধান নদীটি অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র দুর্বল নদীটির উপত্যকাকে গ্রাস করবে।
এই ঘটনাকে বলে নদীগ্রাস। নদী গ্রাসের ফলে নীচের ঘটনাগুলি লক্ষণীয়-
1. প্রধান নদীর উপত্যকাটি যেহেতু বেশি গভীর তাই নদী গ্রাসের ফলে - ছোটো দুর্বল নদীটি কম গভীর উপত্যকার জন্য প্রধান নদীতে গিয়ে পড়ে।
2. অপেক্ষাকৃত দুর্বল নদীটির সম্পূর্ণ জল প্রধান নদীর জলস্রোতে মেশে ও উহার গতিপথ গ্রহণ করে।ফলে-
3. প্রধান নদীর জলের পরিমাণ ও বেগ বৃদ্ধি পায়।
4. অপরদিকে দুর্বল অনুগামী নদীটি প্রধান অনুগামী নদীটিতে মেশায় উহার জলের পরিমাণ কমে যায়। এবং
5. দুর্বল নদীটির উপত্যকা বেশি চওড়া থাকে কিন্তু জলপ্রবাহ বা স্রোত সংকীর্ণ অংশে বর্তমান থাকে। তাই -
6. দুর্বল অনুগামী নদীটিকে বেমানান নদী বলে।
1. অনুগামী নদী:
উদাহরণ : গঙ্গা, সিন্ধু, ব্রহ্মপুত্র নদী।
2.পরবর্তী নদী বা পশ্চাৎগামী নদী:
উদাহরণ: যমুনা নদীর উপনদী অসন।
3. পূর্ববর্তী নদী:
উদাহরণ: a.সিন্ধু, ব্রহ্মপুত্র, শতদ্রু।
b.অরুণ, তিস্তা, ঘর্ঘরা, কুশী নদী (হিমালয় পর্বতের উৎপত্তির পূর্বে)
4. অধ্যারোপ নদী:
উদাহরণ: a. বিহারের সুবর্ণরেখা নদীর মুরি থেকে চান্ডিল।
b.রাজস্থানের চম্পল ও বার্নস।
5. অন্তর্বাহিনী নদী:
উদাহরণ: a.ভারতের লুনি।
b. ইরাকের টাইগ্রিস- ইউফ্রেটিস।
c. ভোলগা, আমুদরিয়া, শিরদরিয়া।
6. বর্হিবাহিনী নদী:
উদাহরণ: নীলনদ, ইয়াংসি,মিসিসিপি মিসৌরি, আমাজন, গঙ্গার উপনদী- যমুনা।
7. শাখানদী:
উদাহরণ: a. গঙ্গার শাখানদী ভাগিরথী।
b.রেসেট্রা ও দামিয়েট্রা নীলনদের শাখানদী।
- নদী নকশা বা জলনির্গম প্রণালী কাকে বলে?
যে নদী জালিকার জ্যামিতিক আকৃতি আছে তাকে নদী নকশা বা জলনির্গম প্রণালী বলে।
- নদী খাতের নকশা কাকে বলে?
নদী যখন নিজ নদীখাতের আকৃতি গঠন করে তাকে নদী খাতের নকশা বলে।
- অনুগামী নদী কাকে বলে?
ভূমির প্রাথমিক ঢাল ও নতি বরাবর প্রবাহিত নদীকে অনুগামী নদী বলে।
- পরবর্তী নদী কাকে বলে?
আয়াম বরাবর যে নদী প্রবাহিত হয়ে মূল নদীতে মেশে তাকে পরবর্তী নদী বলে।
- উপঅনুগামী নদী বা নতি নদী কাকে বলে?
- যে নদী নতি বরাবর প্রবাহিত হয় কিন্তু ভূমির প্রাথমিক ঢালকে অনুসরণ করে না তাকে
উপঅনুগামী নদী বা নতি নদী বলে।
- গৌণ অনুগামী নদী কাকে বলে?
যে নদী নতি বরাবর প্রবাহিত হয়ে আয়াম নদীতে মিলিত হয়, তাহা গৌণ অনুগামী নদী।
- বিপরা নদী বা বি-নদী কাকে বলে?
যে নদী শিলাস্তরের নতির বিপরীত দিকে প্রবাহিত হয়, তাকে বিপরা নদী বা বি-নদী বলে।
- হেরিংবোন নদী নকশা কাকে বলে ?
কঠিন ও কোমল শিলাস্তরগুলি আয়াম বরাবর চ্যুতির জন্য মূল নদীর দুধারে স্থানচ্যুত হলে সৃষ্ট নদী নকশাকে হেরিংবোন নদী নকশা বলে।
- অসংগত নদী কাকে বলে?
ভূগঠন ও ভূমিরূপের সঙ্গে সঙ্গতিহীন নদী ব্যবস্থার নাম অসংগত নদী।
- অধ্যারোপ নদী কাকে বলে?
ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন অঞ্চলের ভূতাত্ত্বিক প্রকৃতির সঙ্গে সঙ্গতিহীন নদীর নাম অধ্যারোপ নদী।
- যে নদী ব্যবস্থায় বিভিন্ন নদী পরস্পরের সাথে সমকোণে মিলিত হয় তাকে বলে-
a. জাফরি রুপী নদী ব্যবস্থা
b.আয়তাকার নদী ব্যবস্থা
- প্লায়া হ্রদ সংলগ্ন মরু পরিবেশে যে নদী নকশা সৃষ্টি হয় তা হল - বিশৃংখল নদী নকশা।
- সমনতি ভূগঠন অঞ্চলে মূল নদীর উপনদী হলো - আয়াম নদী।
- পরবর্তী নদী কাকে বলে?
ভঙ্গিল ভূ-গঠন অঞ্চলে ঊর্ধ্ব ভঙ্গ উপত্যকার মধ্যে প্রবাহিত নদী হলো পরবর্তী নদী।
• বিভিন্ন প্রকার জলনির্গম প্রণালী উদাহরণসহ লেখ।
1. বৃক্ষরুপী জলনির্গম প্রণালী:
উদাহরণ: a. গোদাবরী নদী গোষ্ঠীর জলনির্গম প্রণালী। b. গোদাবরী নদীর সাথে ওয়েন গঙ্গার জল নির্গম প্রনালী।
2. পিনেট জলনির্গম প্রণালী:
উদাহরণ: a. নর্মদা নদীর অববাহিকায়।
b. হিমালয়ের দক্ষিণ প্রান্তে তরাই ভূমি।
3. অনিয়মিত বৃক্ষরুপী জলনির্গম প্রণালী:
উদাহরণ: ভারতের মরুস্থলি অঞ্চলে দেখা যায়।
4. সমান্তরাল বৃক্ষরুপী জল নির্গম প্রণালী:
উদাহরণ- a. হাজারীবাগ মালভূমির খাড়া প্রান্তদেশে।
b. নীলগিরির পূর্ব ঢালে।
c. পশ্চিমঘাটের পশ্চিমঢালে।
d. শিবালিকের দক্ষিণঢালে।
5. জাফরি রুপী জলনির্গম প্রণালী:
উদাহরণ- a. আরাবল্লী পর্বতের পশ্চিম ঢাল। b.অ্যাপালেচিয়ান উচ্চভূমিতে।
6. আয়তাকার জলনির্গম প্রণালী:
উদাহরণ: মধ্যভারতের বেতোয়া ও শোন নদীর অববাহিকায়।
7. কেন্দ্রবিমুখ জলনির্গম প্রণালী:
উদাহরণ- a. ঝাড়খণ্ডের পরেশনাথ পাহাড়ে।
b.অমরকন্টক মালভূমিতে, নর্মদা, জহিলা, অর্প, শোন নদী অববাহিকায়।
8. উপ জাফরী জলনির্গম প্রণালী:
উদাহরণ: মধ্যপ্রদেশের বাঘেলখন্ড অঞ্চলে।
9. কেন্দ্রমুখী জলনির্গম প্রণালী:
উদাহরণ- a. ভারতের দেরাদুন উপত্যকা।
b. নেপালের কাঠমান্ডু উপত্যাকা।
c.আফ্রিকার চাদহ্রদ এলাকায়।
d. এশিয়ার লফনর হ্রদ এলাকায়।
10.অঙ্গুরী আকার জল নির্গম প্রণালি:
উদাহরণ: a. হাজারীবাগ মালভূমিতে দামোদরের উপনদী গুলি।
b. আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ব্ল্যাক হিল পাহাড়কে বেষ্টন করে রেড নদী।
11. বঁড়শিরুপি জলনির্গম প্রণালী:
উদাহরণ: a .গোদাবরী নদীর উপনদী ইন্দ্রাবতীর পশ্চিমমুখী।
b. ঝাড়খণ্ডের খরকাই ও করকরি নদী। যেখানে সুবর্ণরেখাতে মিশেছে।
12. হেরিংবোন জলনির্গম প্রণালী:
উদাহরণ- a.কাশ্মীর উপত্যকার ঝিলাম নদীর।
b. কোশি নদীর বামদিকের উপনদী তামার কোশী।
c. ঘর্ঘরার উপনদী ব্লাপ্তির উদ্ধপ্রবাহে।
13.জটিল জলনির্গম প্রণালী:
উদাহরণ- ছোটনাগপুর মালভূমির কোয়েল নদীর অববাহিকায়।
14. জটাজালরুপী জলনির্গম প্রণালী:
উদাহরণ- a. সুন্দরবন অঞ্চলে।
b. অসমের ব্রহ্মপুত্র।
15. বিনুনীরুপী জলনির্গম প্রণালী:
উদাহরণ- গোদাবরী, কৃষ্ণা মহানদীর বদ্বীপে।